ধর্ম যুদ্ধ চলছে। আওয়ামী লীগ সরাসরি ধর্মের বিরুদ্ধে লেগেছে, ছদ্মবেশে তারা ধর্মযুদ্ধ চালাচ্ছে। বাংলাদেশকে ৩২ টি দাঁতের মাঝখানে একটি জিহ্বা হিসেবে উল্লেখ করে ড. তুহিন মালিক বলেন, বাংলাদেশের চারিদিকে ভারত আর কাফেররা, আর মাঝখানে লা ইলাহা ইল্লাললাহ। জিহ্বা নাড়াচাড়া করলে যেমন দাঁতগুলো কামড় দিয়ে ওঠে, তেমনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের নগ্ন হস্তক্ষেপে জাতি আজ দিশেহারা। আমাদের জিহ্বা তথা বাংলাদেশকে বাঁচাবে শুধু ‘লা ইলাহা ইল্লাললাহ’ জিকির। তিনি ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী শক্তির একমাত্র পরিচয় ‘লা ইলাহা ইল্লাললাহ’ বাঁচিয়ে রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
তুহিন মালিক বলেন, আমরা যে মুক্তিযুদ্ধ করেছি সেটা খন্ডিত মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়নি। নাস্তিক ও ইসলাম বিরোধীদের বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে, এটাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। নিজেদের অস্তিত্বের কারণে এখন আমাদের এ লড়াই করতে হবে। তা না হলে আমাদের নতুন প্রজন্ম ভুলে যাবে যে, এটা শাহজালাল আর শাহপরানদের দেশ; এটা আলেমদের দেশ, এটা দেওবন্দিদের দেশ।
মুহুর্মুহু স্লোগান আর করতালির মধ্যে ড. তুহিন মালিক বলেন, গরীবের বউ সকলের ভাবী, বাংলাদেশ ভারতের কাছে ক্ষুদ্র রাষ্ট্র ; এজন্য বাংলাদেশকে তারা ভাবী মনে করে। শরীরের আকার বড় হলেও হাতি যেমন বনের রাজা হতে পারেনি, তেমনি বাংলাদেশের আয়তন যত ছোট হোক, ভারত আয়তনে যতই বড় হোক- বাংলাদেশের মানুষ কখনো ভারতকে রাজা মানবে না। ‘বাংলাদেশ আজ এক লম্পট প্রতিবেশীর খপ্পরে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই লম্পট প্রতিবেশীর খপ্পর থেকে এদেশের মা-বোনকে বাঁচাতে হবে। এদেশের মা-বোনরা তাদের কাছে ভাবী না; গরীবের বউ তাদের কাছে ভাবী হতে পারে না।
ড. তুহিন মালিক বলেছেন, নাস্তিকদের সাথে নিয়ে শেখ হাসিনা পুরো রাজনীতিটাকে কলুষিত করেছে। যে নাস্তিকরা তার বাবাকে হত্যা করতে চেয়েছে, যে নাস্তিকরা তার বাবা মারা যাবার পর ট্যাংকের ওপরে দাড়িয়ে উলঙ্গ নৃত্য করেছে, যে নাস্তিকরা তার চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বানাতে চেয়েছে; শুধুমাত্র ইসলামকে আঘাত করার জন্য এই নাস্তিকদের শেখ হাসিনা সাথে রেখেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বাম পঁচলে হয় আওয়ামী লীগ আর আওয়ামী লীগ যখন পঁচে যায় তখন তার নাম হয় নাস্তিক।
পূর্ব লন্ডনের ওয়াটার লিলি হলে সিটিজেন মুভমেন্ট ইউকে আয়োজিত ‘হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেমোক্রেসিঃ পারস্পেক্টিভ বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সিটিজেন মুভমেন্ট ইউকের আহ্বায়ক এম এ মালেকের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় সেমিনারে ড. তুহিন মালিক বলেন, আওয়ামী লীগ ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী শক্তিকে মিথ্যা, প্রপাগান্ডা ও হয়রানি করে ধ্বংস করে দিয়ে বাংলাদেশে দিল্লির শাসন ও নাস্তিকবাদীদের মন্দির বানাতে চায়। সারা পৃথিবীতে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয় কিন্তু বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যেখানে সংখ্যাগুরু নির্যাতন হয়। আশ্চর্য্য দেশ যেখানে সংখ্যাগুরু মানুষের মূল্যবোধ, তার লেবাস, তার দাঁড়ি, টুপি এমনকি তার কিতাব রাখা অপরাধ, কিন্তু ঘুষ ও হারাম খাওয়া অপরাধ না। তিনি বলেন, তারা এতোদিন বলেছে জয় বাংলা। প্রমোদ মানকিন কয়েকদিন আগে বলেছেন জয়বাংলা না বললে বাংলাদেশ থেকে বের করা দেয়া হবে। তিনি বলেন, জয় বাংলা আমরা দেখেছি, শুনেছি, কিন্ত জয়ের বাংলা আমরা দেখবো না ইনশাল্লাহ। এটা মুসলমানদের বাংলা, এটা তাওহিদী জনতার বাংলা; এটা ইহুদি-খ্রীষ্টানদের পিতার বাংলা নয়।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাম রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার বলেন, ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিলের স্বাধীনতা ঘোষণায় পরিষ্কার উল্লেখ রয়েছে- সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্যই আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, বাংলাদেশকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেছি। গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র আর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নিয়ে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিলো তা বিনষ্ট করা হয়েছে। এই তিন নীতির ভিত্তিতে আমাদেরকে আগামীর নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।
উল্লেখ্য, সেমিনারে প্রবাসী বাংলাদেশী বক্তারা ড. তুহিন মালিক ও ফরহাদ মজহারকে বাংলাদেশের ক্রান্তিকালীন সময়ের দিক-নির্দেশনাকারী সঠিক ও ন্যায়ের সৈনিক হিসেবে অভিহিত করেন।
দৈনিক সেনবাগের কণ্ঠ/০৬ ডিসেম্বর ২০১৪