মোসলমানদের দ্বিতীয় পবিত্রতম তীর্থস্থান রওজা মোবারক সরিয়ে নেয়ার একটি বিতর্কিত প্রস্তাব সৌদি সরকারের কাছে দেয়া হয়েছে। এ প্রস্তাবে নবী মোহাম্মদের (সা.) রওজা গুঁড়িয়ে দিয়ে তার দেহাবশেষ অজ্ঞাত স্থানে অথবা পার্শ্ববর্তী সমাধিক্ষেত্রে সরিয়ে নেয়ার কথা বলা হয়েছে। ওহাবী মতে, সমাধি উঁচু করা ও নামফলক রাখা কবর পূজার পর্যায়ে পড়ে বলে এভাবে রওজা গুঁড়িয়ে দেয়ার যুক্তি খাড়া করা হয়েছে।
ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট ও ডেইলি মেইল মঙ্গলবার এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সৌদি আরবের একজন শীর্ষস্থানীয় আলেম এ প্রস্তাব মদিনায় মসজিদে নববীর তত্ত্বাবধায়কদের কাছে পাঠিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য রওজা মোবারক ও মসজিদে নববীর প্রধান রক্ষক স্বয়ং সৌদি বাদশা আব্দুল্লাহ।
এই প্রস্তাবটি সামনে এনেছেন আরেকজন আলেম যিনি ওই প্রস্তাবে মক্কার পবিত্র স্থান গুলো ধ্বংসের প্রতিবাদ করেছেন। এছাড়া মহানবীর (সা.) রওজার পাশে যেসব সমাধি রয়েছে সেসব শিয়া মুসলিমদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র স্থান বলে বিবেচ্য। কারণ সেসব সমাধিতে নবীর পরিবারের লোকজন শায়িত আছেন।
৬১ পৃষ্ঠার ওই প্রস্তাব সংক্রান্ত নথিতে, মহানবীর (সা.) দেহাবশেষ পার্শ্ববর্তী জান্নাতুল বাকিতে স্থানান্তরেরও সুপারিশ করা হয়েছে। এ স্থানে নবী পরিবারের সদস্যরা শায়িত আছেন যাদের কোনো নামফলক নেই। নবীর দেহাবশেষও এই স্থানে নাম পরিচয়হীন একটা সমাধিতে স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
তবে অত্যন্ত স্পর্শকাতর এ বিষয়ে সৌদি সরকার প্রস্তাবটি বিবেচনা করবে কি না সে ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি। অবশ্য ওহাবী মতাবলম্বী সৌদি রাজ পরিবার কোনো সমাধি চিহ্নিত করা বা এর উপর উঁচু স্থাপনা নির্মাণের ঘোর বিরোধী। তারা নিজেরাও এ রীতি কড়াকড়িভাবে পালন করেন।
তাছাড়া, মসজিদুল নববী ও রওজা মোবারক শিয়া ও সুন্নি উভয় মোসলমানের কাছে সমান পবিত্র স্থান। ইসলাম বিশেষজ্ঞ ড. ইরফান আল আলাবি এ ব্যাপারে বলেন, ওই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করলে মোসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তীব্র হবে। মুসিলম বিশ্বে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দেবে। যেখানে সিরিয়া ও ইরাকে শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব সশস্ত্র রূপ নিয়েছে এবং সেটা নির্মমতার পর্যায়ে চলে গেছে।
ইসলামিক হেরিটেজ রিচার্স ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. আলাবি ইন্ডিপেন্ডেন্টকে আরো বলেন, ‘মানুষ নবীর পরিবার যেসব ঘরে বাস করতেন সেসব স্থান ঘুরে দেখে। এর পর তারা তার সমাধিতে দোয়া করার জন্য যায়। এখন ওহাবী এটা বন্ধ করতে চাচ্ছে কারণ তারা মনে করে এমনকি করা ‘শিরক’ (আল্লাহর সাথে অংশীদারিত্ব)। এটা বন্ধ করার জন্য তারা উপায় দেখছে যে, নবীকে সরিয়ে ওই অজ্ঞাত সাবাহীদের সমাধিতে সরিয়ে নিলেই হলো।’
উৎস: বাংলামেইল২৪ডটকম