মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৯০ বছরের কারাদণ্ড প্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম স্যারের অবস্থা সংকটাপন্ন।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটায় হঠাৎ করে তার ব্লাড প্রেসার বেড়ে গেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছে। তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ)-তে রাখা হয়েছে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, সকালে গোলাম আযম স্যারের ব্লাড প্রেসার হঠাৎ করে বেড়ে গেলে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসিইউতে ভর্তি করা হয়।
তার অবস্থা সংকটাপন্ন বলেও জানান ফরমান আলী।
এদিকে, দুপুরে অধ্যাপক গোলাম আযম স্যারের সঙ্গে তার স্ত্রী, ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী, পরিবারের সদস্য ও আইনজীবীরা সাক্ষাৎ করেছেন।
সাক্ষাৎ শেষে অধ্যাপক গোলাম আযম স্যার আইনজীবী আসাদ উদ্দিন বলেছেন, ‘হাসপাতালের সিসিইউতে অধ্যাপক গোলাম আযম স্যার নিজের শরীরের খোঁজ-খবর নেওয়ার আগেই তিনি আমাদের কাছে মাওলানা নিজামী, আল্লামা সাঈদী, ছাত্র শিবির সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং জামায়াত ইসলামী সম্পর্কে জানতে চান।’
তিনি বলেন, ‘এ সময় অধ্যাপক গোলাম আযম স্যার জামায়াত নেতাদের মামলার রায় সম্পর্কেও বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করে উত্তর জানার চেষ্টা করেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘এক পর্যায়ে অধ্যাপক গোলাম আযম স্যার তার ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমীকে আগামী ঈদে কয়েকজন মানুষকে সহযোগিতা করার কথা বলেন।’
আইনজীবী আসাদ জানান, ‘আমাকে তিনি (অধ্যাপক গোলাম আযম স্যার) শুধু এটুকুই বললেন- যে অপরাধে আমাকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে, তা কস্মিনকালেও ক্রাইম এগেইনস্ট হিউম্যানিটি নয়।’
‘তখন আমি তাকে বললাম, জালিমের কাছে মজলুমের কখনো ন্যায়বিচার হয় না। আমরা তো চেয়ে আছি মহান আল্লাহর ফয়সালার দিকে। তার শারীরিক অবস্থার জন্য সবাই দোয়া করবেন’, যোগ করেন ডিফেন্সের এই আইনজীবী।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই ট্রাইব্যুনাল অধ্যাপক গোলাম আযম স্যারকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
গোলাম আযম স্যারের বিরুদ্ধে আনা ৫ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের ৬১টির সবগুলো অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে এ রায় প্রদান করেন ট্রাইব্যুনাল।
রায়ে ট্রাইব্যুনাল উল্লেখ করেন, গোলাম আযম স্যার যে অপরাধ করেছেন তা মৃত্যুদণ্ডতুল্য। কিন্তু তার বয়স ৯১ বছর। এ বিবেচনা করে তাকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হলো।
এদিকে, অধ্যাপক গোলাম আযম স্যারের পরিবারের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে তার সুস্থতা কামনা করে দোয়া কামনা করা হয়েছে।
এছাড়া জামায়াতে ইসলামী মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে অধ্যাপক গোলাম আযম স্যারের আরোগ্যের জন্য দোয়া করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ ওই বিবৃতিতে বলেন, অধ্যাপক গোলাম আযম গুরুতর ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তার অবস্থা সংকটাপন্ন বলে আমরা জানতে পেরেছি।
তিনি অবিলম্বে গোলাম আযমকে মুক্তি দিয়ে মুক্ত পরিবেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
নিজস্ব প্রতিবেদক/০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪