বিশিষ্টজনদের সম্মানে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে গতকাল জামায়াতের ইফতার মাহফিলে বেগম খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন দলের নেতারা অংশ নেন : নয়া দিগন্ত
বিশ দলীয় জোট নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ঈদের পর আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি দিয়ে ক্ষমতা জবরদখলকারী সরকারকে বিদায় করা হবে। ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচন বর্জন করে মানুষ প্রমাণ করেছে তারা আমাদের সাথে আছে। সব বিরোধী দল আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। ৯৫ ভাগ জনগণ আমাদের সাথে আছে। কাজেই সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের আরেকটু শক্ত ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা কোনো অগণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতায় আসুক চাই না। নিরপেক্ষ একটি সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচন চাই। জনগণ যেন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেটাই আমরা চাই। গতকাল বুধবার রাজধানীর সোনারওগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেগম খালেদা জিয়া এ কথা বলেন। দেশের রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, প্রাক্তন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ওলামা-মাশায়েখ, ব্যবসায়ী ও কৃষিবিদসহ বিশিষ্ট নাগরিকদের সম্মানে জামায়াত এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে।
বেগম খালেদা জিয়া দেশের পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ মন্তব্য করে বলেন, দেশের মানুষ অতি কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করছে। এই রমজানেও অনেকে তিন বেলা খেয়ে রোজা রাখতে পারছেন না। দেশ নানা সমস্যায় জর্জরিত। বর্তমান জালিম সরকার, জবরদখলকারী সরকার দেশকে একেবারে শেষ করে দিয়েছে। দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে। খুন, গুম, ডাকাতি-ছিনতাই, রাহাজানি বেড়েই চলেছে। কারো জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। দেশ এক মহাসঙ্কটের মধ্যে চলছে। দেশকে এই অবস্থা থেকে মুক্ত করার জন্য দেশের জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ। দেশকে যারা ধ্বংস করছে, তাদের হাত থেকে রক্ষার জন্য সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।
ঈদের পর নতুন কর্মসূচি দিয়ে অন্যায়ভাবে ক্ষমতাদখলকারী সরকারকে বিদায় করব। আমরা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। আমরা কোনো অগণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতায় আসুক চাই না। আমরা একটি গণতান্ত্রিক সরকার চাই।
বেগম জিয়া বলেন, পুলিশ, র্যাব দিয়ে মানুষ হত্যা করে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না। র্যাব মানুষ হত্যাকারী টাকা নিয়ে মানুষ হত্যাকারী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। কাজেই র্যাব বাতিল করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। আমরা আওয়ামী লীগকেও বলব, আসুন সবাই মিলে দেশের জন্য কাজ করি। গণতন্ত্র রক্ষা, মানুষের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সবাই একসাথে কাজ করি। বক্তব্যের সমাপনীতে তিনি বলেন, আসুন আমরা সবাই মুনাজাত করি আল্লাহ যেন এই জালিম সরকারের হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করে।
জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ইফতার মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের আমির মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব:) অলি আহমদ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) মো: ইব্রাহীম বীরপ্রতীক, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, এনপিপি চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নীলু, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি এ এইচ এম কামরুজ্জামান, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুল মোবিন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি রেজাউল করিম, এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, সাম্যবাদী দলের সম্পাদক সাঈদ আহাম্মদ, ছারছীনার ছোট পীর মাওলানা আরিফ বিল্লাহ, খেলাফত আন্দোলন নেতা মুজিবুর রহমান হামিদী।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. এ আর গানি, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, আবদুল্লাহ আল নোমান, নজরুল ইসলাম খান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি নেতা মীর নাছির উদ্দিন, মেজর জেনারেল রুহুল আলম চৌধুরী, ব্যারিস্টার হায়দার আলী, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, খাইরুল কবির খোকন, শিরীন সুলতানা, হাবিব-উন-নবী সোহেল, আব্দুস সালাম, ব্যারিস্টার নাসিম উদ্দিন অসিম, মুসলিম লীগ মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, সাংবাদিক কলামিস্ট সাদেক খান, শফিক রেহমান, ড. মাহবুব উল্লাহ, মাহফুজ উল্লাহ, ড. রেজওয়ান সিদ্দিকী, ড. তারেক শামসুর রেহমান, নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদ, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী, ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এ বি এম উবায়দুল ইসলাম ও ড. মামুন আহমেদ, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, ইঞ্জিনিয়ার আ ন হ আক্তার হোসেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি শওকত মাহমুদ, জাতীয় প্রেস কাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কবি আব্দুল হাই শিকদার, সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী, মাওলানা কামাল উদ্দিন জাফরী, অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন, সাবেক সচিব হাফিজুল ইসলাম মিয়া, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব আবুল কাসেম মিঠুন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আবদুস শহীদ। সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইন ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান ইফতার মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন।
জামায়াত নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা এ টি এম মাসুম, মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, মো: আবদুর রব, কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সহকারী সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আমিনুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও বরিশাল মহানগরী জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসাইন হেলাল, ঢাকা মহানগরী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মোবারক হোসেন প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত ইফতার মাহফিলে উপস্থিত সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আজ যাদের এখানে বসার কথা ছিল, অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে এ জালেম সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য দীর্ঘ চার বছর ধরে তাদের অন্যায়ভাবে কারাগারে আটক রেখেছে। গত বছর যিনি এই ইফতার মাহফিলে আমাদের সাথে ইফতার করেছিলেন তিনিও আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন। গভীর পরিতাপের বিষয় তার মতো একজন পরিচ্ছন্ন লোকের নামাজে জানাজাও সরকার সুষ্ঠুভাবে করতে দেয়নি। তার নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণ করতে যাওয়া নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে সরকার তাদের ওপর জুলুম এবং নির্যাতন চালিয়েছে। তিনি বলেন, দেশ ও জাতি আজ এক কঠিন সঙ্কটে নিপতিত। এই সরকার মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থার কবর রচনা করে ৫ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনের আয়োজন করে জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করেছে। ইফতারির পূর্ব মুহূর্তে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বাংলাদেশসহ মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক/দৈনিক সেনবাগের কণ্ঠ/৯ জুলাই ১৪