রমনা বোমা হামলা : ৮ জনের ফাঁসি, ৬ জনের যাবজ্জীবন

রমনা বোমা হামলা মামলার রায়ে ৮ জনের ফাঁসি ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।

রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ইতিহাসের বর্বরোচিত বোমা হামলার ঘটনার ১৩ বছর পরে সোমবার এ রায় ঘোষিত হলো। রায় ঘোষণা করেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রুহুল আমিন।

বেলা পৌনে ১২টায় বহুল আলোচিত এ মামলার রায় পড়া শুরু করেন বিচারক। রায় পড়া শেষ হয় বেলা ১২টায়।

আসামিদের মধ্যে মুফতি হান্নান, আরিফ হাসান সুমন, শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, হাফেজ মওলানা আবু তাহের, মওলানা আব্দুর রউফ, মওলানা সাব্বির ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির, মওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, হাফেজ মওলানা ইয়াহিয়া ও মওলানা আকবর হোসাইন কারাগারে ছিলেন। তাদেরকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।

আসামি মওলানা মো. তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান ও মুফতি আব্দুল হাই পলাতক আছেন।

এর আগে গত ১৬ জুন মামলার রায় ঘোষিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রায় প্রস্তুত না হওয়ায় বিচারক ২৩ জুন রায়ের জন্য দিন পুনর্নির্ধারণ করেন।

গত ৮ ও ১৮ মে রাষ্ট্রপক্ষে ও আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। গত ১৮ মে আইনি পয়েন্টে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন রাষ্ট্রপক্ষের এসএম জাহিদ সরদার। তিনি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে দাবি করে সকল আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন।
অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী টিএম আকবর যুক্তিতর্কের জবাবে আইনি পয়েন্টে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি দাবি করে সকল আসামির খালাস দাবি করেন।

গত ৫ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি ইন্সপেক্টর আবু হেনা মো. ইউসুফের পুনঃসাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। পুনঃসাক্ষ্য প্রদানের সময় মোহাম্মদপুরের যে বাড়িতে হত্যা পরিকল্পনা হয়েছিল, সে ঘটনাস্থলের মানচিত্র আদালতে উপস্থাপন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা শেষ করেন।

গত বছরের ১৪ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবু হেনা মো. ইউসুফ সাক্ষ্য দেওয়ার সময় মোহাম্মদপুরের যে বাড়িতে হত্যা পরিকল্পনা হয়েছিল, সে ঘটনাস্থলের মানচিত্র আদালতে উপস্থাপন করেননি। আইনজীবীদের ভুলে তা উপস্থাপন ছাড়াই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করেন রাষ্ট্রপক্ষ।

এরপর শুরু হয় মামলার প্রথম পর্যায়ের যুক্তিতর্ক। এর শেষ পর্যায়ে আসামিপক্ষ তদন্ত কর্মকর্তার ভুলের সুযোগ নিতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এসএম জাহিদ সরদার তড়িঘড়ি করে তা উপস্থাপন করার জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে পুনরায় সাক্ষ্য প্রদানের (রি-কল) জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেন।

কিন্তু আসামিপক্ষে তদন্ত কর্মকর্তার পুনরায় সাক্ষ্য প্রদানের বিরোধিতা করা হয়। তাদের দাবি, যুক্তিতর্কের পর্যায়ে মামলার ত্রুটি সারাতে কোনো সাক্ষীকে রি-কল করা যাবে না।

আসামিপক্ষের বিরোধিতা সত্ত্বেও বিচারক রুহুল আমিন রি-কলের আবেদন মঞ্জুর করলে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক হোসেন ওই আদেশ আইনানুগ হয়নি বলে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যাওয়ার ঘোষণা দেন। কিন্তু মামলার তিনটি তারিখেও হাইকোর্টের আদেশ দাখিল করতে না পারায় আদালত পুনঃসাক্ষ্যগ্রহণের নির্দেশ দেন।

গত বছরের ১০ নভেম্বর আসামিরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় সাক্ষ্য দেন। এ সময় সব আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন।
গত বছরের ২৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। মামলাটির ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।

২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল ১ বৈশাখে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকালে জঙ্গিদের বোমা হামলায় ১০ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে ঘটনাস্থলে ৯ জন এবং পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন মারা যান। আহত হন অনেকে।

নৃশংসতম এ বোমা হামলা মামলাটির তদন্তে দীর্ঘদিন কালক্ষেপণ করা হয়। বারবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তার পরিবর্তন হয়। বিপাকে পড়ে তদন্তকাজ।

অবশেষে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ঘটনার প্রায় ৮ বছর পর ২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

মামলাটিতে ২০০৯ সালের ১৬ এপ্রিল ১৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন আদালত।

উৎসঃ   বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

Post a Comment

Previous Post Next Post