ছাত্রলীগের এক নেতাকে কতবার বহিষ্কার?

ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবদুল আজিজ ফয়েজ। তাঁকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয় ২০১৩ সালের নভেম্বরে। কলেজছাত্র আসাদুজ্জামান ফারুক হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সেই বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার হয়নি। কিন্তু আবারও আজ রোববার আরেক ঘটনায় তাঁকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হলো।


বহিষ্কারের পরও দীর্ঘদিন তিনি ছিলেন কলেজের ছাত্রাবাসে। এরপরও পুলিশের খাতায় ছিলেন পলাতক। সক্রিয় ছিলেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। ২০১৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর বকশীবাজারে বিএনপি-ছাত্রদলের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের সময় গুলি ছুড়তে থাকা অবস্থায় ধরা পড়েন প্রথম আলোর ক্যামেরায়। কিন্তু সে সময় ওই ব্যক্তি ছাত্রলীগের কেউ নন বলে তখন এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন তৎকালীন সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান।

তৃতীয় দফায় গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা কলেজের সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ১৯ জনকে বহিষ্কার করা হয়। এর মধ্যে ১০ জন পদধারী। বাকি নয়জন কর্মী। কর্মীর তালিকায় রয়েছে সেই আবদুল আজিজের নাম। শনিবার ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে ওই ফয়েজ বহিরাগতদের নিয়ে অস্ত্রসহ আক্রমণে অংশ নেন বলে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্রগুলো জানিয়েছে, তিনি ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নূর আলম ভূঁইয়ার ঘনিষ্ঠ।

২০১৩ সালের ২৯ নভেম্বর রাতে ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের সভাপতি ফুয়াদ হাসান ও সাধারণ সম্পাদক সাকিব হাসানের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। দুই পক্ষই একে অপরের দিকে গুলি-বোমা ছুড়ে কলেজে আতঙ্ক ছড়ায়। এ সময় কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় অংশ নেওয়া আসাদুজ্জামান ফারুকসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হন। ওই রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান ফারুক।

পরদিন কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাকিব হাসান বাদী হয়ে ২৩ জনের বিরুদ্ধে ফারুক হত্যার অভিযোগে নিউমার্কেট থানায় একটি মামলা করেন। এজাহার থেকে জানা যায়, সেই মামলার ২ নম্বর আসামি ফয়েজ। ঘটনার পর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফুয়াদ হাসান, যুগ্ম সম্পাদক আবদুল আজিজ ফয়েজসহ সাতজনকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ রাসেলের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।

তবে সেই বহিষ্কার যে লোক দেখানো ছিল, তার প্রমাণ পরবর্তী সময়ে অস্ত্রসহ ছাত্রলীগের মিছিলে ফয়েজের সরব উপস্থিতি। তবে ওই সময় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান বলেছিলেন, বিএনপির নেতা–কর্মীরা অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করেছিলেন।

ফয়েজের বহিষ্কারাদেশ কবে তোলা হয়েছে, সে সম্পর্কে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের দিয়ে তাৎক্ষণিক একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখানে যে ফয়েজের কথা উল্লেখ রয়েছে, সে জুনিয়র। আগের বহিষ্কৃত ফয়েজের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই।

তবে তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্য আগের ফয়েজকে চিহ্নিত করেছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির আট নেতার সমন্বয়ে গঠিত কমিটির জ্যেষ্ঠতম সদস্য সহসভাপতি কাজী এনায়েত প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকালের ঘটনায় বহিরাগত ব্যক্তিরা এসে কলেজে আক্রমণ করেছে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে ফয়েজকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। ফয়েজ আগে ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ছিল।’

Post a Comment

Previous Post Next Post