জামায়াত নেতা জনাব আবদুল কাদের মোল্লার বিষয়েও হয়তো ভবিষ্যতে এমনটি বলা হতে পারে- যে রায়ের ভিত্তিতে তাকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে তা সঠিক ছিল না।
১২ ই ডিসেম্বর ২০১৩ ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায়। এই দিনটি ইতিহাসে একটি কালোদিন হিসেবে চিহিৃত হয়ে থাকবে। এই দিনে বিশ্বের ইতিহাসে একজন নিরীহ, নিরাপরাধ মানুষকে রাষ্ট্রীয় আয়োজনের মধ্যে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ইতিহাস হয়ত একদিন প্রমাণ করবে এটি ছিল একটি রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ড। দার্শনিক সক্রেটিসকে হ্যামলক বিষ প্রয়োগে হত্যার রায় দিয়েছিল আদালত। আদালতই যিশু খ্রীষ্টকে (হযরত ঈসা আ.) শূলে চড়িয়ে হত্যার রায় দিয়েছিল। জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্যালিলিওকেও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয় আদালতের নির্দেশেই। হাজার বছর পর এসে প্রমাণিত হয়েছে তিনটি রায়ই ভুল রায় ছিল। বিচার-ইতিহাসে এ ধরনের রায়ের অসংখ্য নজির রয়েছে- যার ভিত্তিতে কথিত অভিযুক্ত ব্যক্তি হত্যার পর প্রমাণিত হয়েছে, আদালতের দেয়া রায়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত ছিল না। জামায়াত নেতা জনাব আবদুল কাদের মোল্লার বিষয়েও হয়তো ভবিষ্যতে এমনটি বলা হতে পারে- যে রায়ের ভিত্তিতে তাকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে তা সঠিক ছিল না। এই জন্যই আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্বদ্যিালয়ের অধ্যাপক ম্যাকলোয়েন চার্লস মানুষের দূর্দশার চিত্র আঁকতে গিয়ে বলেছেন, ”আমার মতে ইতিহাসের কোন যুগেই কোন ব্যক্তি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এত কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়নি, প্রশাসনের সামনে বিচার বিভাগ কখনো এতটা অসহায়ত্ব বোধ করেনি, এ বিপদ অনুভব করা এবং তার প্রতিকারের ব্যবস্থা সম্পর্কে পূর্বে কখনো চিন্তা করার এতটা তীব্র প্রয়োজন দেখা দেয়নি-যতটা আজ দেখা দিয়েছে”
পৃথিবীর সকল নীতি নৈতিকতা, মানবাধিকার, সব উপেক্ষা করেও যাকে হত্যা করা হয়েছে তিনি-একাধারে একজন রাজনীতিবিদ, প্রতিথযশা শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, লেখক, ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও সদালোপী প্রাণপুরুষ। বিশ্বের কোটি-কোটি মানুষের হদয় নিংড়ানো ভালবাসা আর চোখের অশ্রু সিগ্ধ, হয়ে আমাদেও প্রাণ-প্রিয় নেতা এভ’বন ত্যাগ করেছেন। এই দিন শুধু একজন আব্দুল কাদের মোল্লাকেই হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছে মানবাধিকার, সত্যপন্থা, কল্যাণ সুন্দর আর ন্যায়ের প্রতিক আব্দুল কাদের মোল্লাকে। যিনি নিজেই তার দীর্ঘ সাফল্যমন্ডীত কর্মের আবিস্কারক। যিনি ২ ডিসেম্বর ১৯৪৮ সালে ফরিদপুর জেলার, সদরপুর উপজেলার, জরিপারডািঈ, গ্রামে পিতা- মোঃ সানাউল্লাহ মোল্লা এবং মাতা বাহেরুন্নেসা বেগম এর ঘরকে আলোকিত করে এই পৃথিবীতে আগমন করেন।
মেধাবী আব্দুল কাদের মোল্লা শিক্ষাজীবন শুরু করেন ১৯৫৯ প্রাথমিক শিক্ষা বৃত্তি লাভ করার মধ্যে দিয়ে, আর প্রচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৭৭ সালে শিক্ষা প্রশাসন থেকে মাস্টার্স ডিগ্রীতে প্রথম শ্রেনীতে প্রথম হন অধিকার করেন তিনি। সেই পথ ধরে কর্মজীবনেও পরতে পরতে রাখেন সাফল্যের সাক্ষর। জনাব আব্দুল কাদের মোল্লা ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঢাকার বিখ্যাত বিদ্যাপীঠ উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মধ্যে দিয়ে মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে শিক্ষকতাকে বেছে নেন। পরবতীতে বাংলাদেশ রাইফেলস পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষক এবং একই প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িতও পালন করেন অত্যান্ত সুনাম ও দক্ষতার সাথে। এরপর তিনি ইসলামী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর সংস্কৃতি কর্মকর্তা ১৯৭৮ সালে রিসার্স স্কলার হিসাবে বাংলাদেশ ইসলামী সেন্টার, ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত তিনি মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। লেখালেখি ও সাংবাদিকতায় পারদর্শী জনাব আব্দুল কাদের মোল্লা ১৯৮১ সালে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক হিসাবে সাংবাতিকতার পেশার সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। সেখানেও যেন হারবার নয়। তিনি ১৯৮২ ও ১৯৮৩ সালে পরপর দুই বছর ঢাকা ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট (ডি ইউ জে) এর সহসভাপতি নির্বাচিত হন। তিনিই তার কর্মময় জীবনের সাক্ষী। তার পরিচয় তিনি নিজেই। চলনে-বলনে, সহজ-সরল আর সাদাসিধে, বুদ্ধি-বাগ্নীতায় অসাধারণ, কর্মপ্রাণ চঞ্চলতায় যেন সর্বত্র বিরাজমান, ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন ও নিরহংকার, পরোপকারী এবং স্বজন ব্যাক্তি হিসেবে সকলের নিকট পরিচিত। যিনি একবার তার সাহচর্য পেয়েছেন তিনি তাকে ভুলতে পারবেন না। কারাগারে অসংখ্য ভক্ত অনুরক্ত থেকে তার আচার ব্যবহারের প্রশংসা শুনেছি। দ্বীনের দায়ী হিসেবে সারা বাংলাদেশে নয়, বরং ছুটে বেড়িয়েছেন -সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জাপান, পাকিস্তান সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর অনেক পান্তে। মিথ্যা কালিমা আর ষড়যন্ত্রেও কালো কাপড় কি সেই আলোচ্ছটাকে আবৃত করতে পারে? যেই শির আজন্ম এক পরওয়ারদিগার ছাড়া কারো কাছে নত হয়নি, ফাঁসির আদেশে সেই শির দুনিয়ার কোন শক্তির কাছে নতি শিকার করতে পারে? শাহাদাতের পূর্বে আল্লাহর দ্বীনের মুজাহিদের জবানীতে এমন সাহসী উচচারণ উদ্দীপ্ত করেছে সারা বিশ্ববাসীকে। তিনি বললেন-”বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামী আন্দোলনের জন্য আমি আমার জীবন উৎসর্গ করেছি। আমি অন্যায়ের কাছে কখনও মাথা নত করিনি, করবো না। দুনিয়ার কোন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রাণ ভিক্ষা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। জীবনের মালিক আল্লাহ। কিভাবে আমার মৃত্যু হবে তা আল্লাহই নির্ধারণ করবেন। কোন ব্যক্তির সিদ্ধান্তে আমার মৃত্যু কার্যকর হবে না। আল্লাহর ফায়সালা অনুযায়ীই আমার মৃত্যুর সময় ও তা কার্যকর হবে। সুতরাং আমি আল্লাহর ফায়সালা সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেবো।”
কাজেই এ দুনিয়ায় কিভাবে প্রাণ বাঁচিয়ে চলতে হবে এটা চিন্তার নয়। বরং আসল চিন্তার বিষয় হলো ঈমানকে কিভাবে বাঁচানো যাবে কিভাবে থাকা যাবে আল্লাহর আনুগত্যের গন্ডির মধ্যে। যদি দুনিয়ায় প্রাণ বাঁচানোর জন্য ঈমান হারিয়ে ফেলে তাতো বিরাট এক ব্যর্থতা। তাহলে সে ঈমানের মূল্য কী? আর ঈমান বাঁচাতে যদি দুনিয়ায় প্রাণ বিসর্জিত হয় তাহলে এ এক মহা সফলতা। এমন মৃত্যু সত্যিই গৌরবের। এই মৃত্যুকে অভিনন্দন। শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা সত্যিই অনেক সৌভাগ্যের অধিকারী। তার মর্যাদা আসলেই ঈর্ষনীয়।
সুতরাং প্রাণের জন্য উৎসর্গীত ঈমান আর ঈমানের জন্য উৎসর্গীত প্রাণ বড়ই ব্যবধান। হযরত রাশেদ বিন সা’দ জনৈক সাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন। কোনো এক ব্যক্তি রাসূলূল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! কবরে সকল মুমিনের পরীক্ষা হবে, কিন্তু শহীদের হবে না, এর কারণ কী? হুজুর (সা.) জবাবে বলেন, তার মাথার ওপর তলোয়ার চমকানোই তার পরীক্ষার জন্য যথেষ্ট।’ জন্ম থেকে শাহাদাত পর্যন্ত জনাব আব্দুল কাদের মোল্লা একটা নাম, একটি প্রেরনা,একটা জীবন্ত ইতিহাস।
রাজনীতি সচেতন জনাব আব্দুল কাদেও মোল্লা অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যায়নকালেই তিনি কম্যূনিজমের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ছাত্রইউনিয়নে যোগ দেন। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তিনি এ সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকার পর মাওলানা মওদূদী (রঃ) লিখিত তাফহীমুল কুরআন পড়ে আলোকিত জীবনের সন্ধান পেয়ে ছাত্র ইউনিয়ন ছেড়ে তিনি তৎকালিন সময়ে মেধাবী ছাত্রদের সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ পূর্ব পাকিস্তান শাখায় যোগদান করেন। চৌকস নেতৃত্বের অধিকারী জনাব মোল্লা ছাত্রসংঘের শহিদুল্লাহ হল সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি, ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারী ও একই সাথে কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ সালে জামায়াতে যোগ দেন এবং সর্বশেষ তিনি জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেলে হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
জনাব আব্দুল কাদের মোল্লা বিভিন্ন মেয়াদে চার চারবার কারাবরণ করেছেন। আইয়ুব সরকারের নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনের দায়ে ১৯৬৪ সালে প্রথমবারের মত তিনি বাম রাজনীতিক হিসেবে গ্রেপ্তার হন। ১৯৭২ সালে তিনি আবার গ্রেপ্তার হন কিন্তু স্থানীয় জনতার বিক্ষোভের মুখে পুলিশ তাকে স্থানীয় পুলিশ স্টেশন কাস্টোডী থেকেই ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়! জেনারেল এরশাদের শাসনের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের কারনে আব্দুল কাদের মোল্লাকে আবারও আটক করে রাখা হয়। পরে উচ্চ আদালত তার এ আটকাদেশকে আবৈধ ঘোষণা করলে চারমাস পরে তিনি মুক্ত হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন করায় তৎকালীন বিএনপি সরকার ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তাকে আটক করে।
যাকে তথাকথিত যুদ্ধাপরাধী বানিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি যুদ্ধাপরাধ তো দুরের কথা স্বাধীনতার স¦পক্ষে একজন যোদ্ধার প্রস্ততিই নিয়েছেন। এবার শুনুন জনাব আব্দুল কাদের মোল্লা সেইফ হোমে জিজ্ঞাসাবাদেও ৭১ সালে তার ভ’মিকা নিয়ে যা বললেন তিনি- ” ২৩ মার্চ, ১৯৭১ ওই দিন আমরা ১২ টার সময় জেসিও সম্ভবত উনার নাম ছিল মফিজুর রহমানের ডাকে আমরা বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ পড়–য়া ছাত্র এবং স্কুলের উচ্চ শ্রেণীর কয়েকজন ছাত্র একত্রিত হই। মফিজুর রহমান সাহেব আমাদেরকে বললেন, তিনি বিকাল থেকেই আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং দেবেন এবং সেই লক্ষ্যে তিনি কিছু কাঠের তৈরি ডামি রাইফেল জোগাড় করেছেন। তিনি আরো বললেন, রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে হয় না। তাই আমাদেরকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা ওইদিন বিকালে তার পরামর্শ মতো ৩০/৪০ জন একত্রিত হই। তিনি প্রাথমিক পরীক্ষা নেয়ার পর ২/১ জন বাদে প্রায় সবাই প্রশিক্ষণ নেবার জন্য মনোনীত করেন এবং ঐদিন থেকেই আমরা পিটি, প্যারেড শুরু করি। তিনি প্রথম তিন দিন আমাদেরকে দামি রাইফেল দেন নাই। পরে ২০/২১টি দামি রাইফেল আমাদেরকে দেন এবং এই রাইফেলগুলো দিয়েই আমরা প্রশিক্ষণ চালিয়ে যেতে থাকি।”
শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লাকে হত্যা করে আওয়ামীলীগ তার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করেছে। কিন্তু রাতের একান্তে নিভৃত্বে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের বিবেক কে যদি প্রশ্ন করেন, আপনি কি কসাই কাদের কে হত্যা করেছেন? আমার মনে হয়, উত্তর হবে না। আপনি জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে হত্যা করেছেন। যিনি এখন আপনার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। এক সময় তিনি আপনার রাজনৈতিক মিত্র ছিলেন। একসময় একান্ত নিভৃত্তে ঢেকে রাজনৈতিক শলা-পরামর্শ ও করেছেন তার সাথে। আব্দুল কাদের মোল্লা সেইফ হোমে জিজ্ঞাসাবাদেও বলেছেন-”১৯৯৬ সালের জুন মাসের নির্বাচনে জামায়াত এবং বিএনপি আলাদাভাবে নির্বাচন করে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একপর্যায়ে আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন এবং আমাকে বললেন আমরা তো সরকার গঠন করলাম, আমাদের কিছু পরামর্শ দেন। বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর মূখ্যসচিব ছিলেন এবং তিনি আমাকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে রিসিভ করেন। আমি তখন প্রধানমন্ত্রীকে কিছু গঠনমুলক পরামর্শ দেই যা শুনে তিনি আমাকে সাধুবাদ দেন। একইভাবে তিনি পরে আমাকে আরো দুবার ডেকেছিলেন। এখন আমি মনে করছি দীর্ঘদিন যাদের সঙ্গে রাজনৈতিক আন্দোলন করলাম, মিটিং মিছিল করলাম, সুসম্পর্ক রাখলাম, সখ্যতা রেখে চলেছি তারা এখন শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য দীর্ঘ ৪০ বছর পর আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।”
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জাতির জিজ্ঞাসা যে কুখ্যাত, হত্যাকারী, কসাই কাদেরকে জাতি চিনত, তাহলে আপনি কি সেই কসাই কদেরের সাথে সাক্ষাত করেছিলেন? আমরা রাজনৈতিক চোলাবালিতে এতটাই আটকে গেছি তা সত্যিই জাতির জন্য দূর্ভাগ্যজনক। শেখ হাসিনা আজ তার শত্রু কাদের মোল্লাকে হত্যা করেছেন শুধু রাজনৈতিক কারণে আর প্রভ’দের খুশি করতে। আর বিরোধী দলীয় নেত্রী আজ তার রাজনৈতিক জোট মিত্র কাদের মোল্লার মৃত্যুতেও প্রকাশ্যে সমবেদনা জানাতে পারেননি, তাও রাজনৈতিক কারণেই। যদিও হয়ত তিনি ব্যাথিত। শেখ হাসিনার হয়ত এখন বিস্মিত!! কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে এত কুৎসা রটনার পর তিনি যে আজ পৃথিবী বাসীর নিকট বিখ্যাত আর এতজনপ্রিয়।
ফরিদপুরের আজগ্রামের আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যু এখন সারা পৃথিবীর মুসলিম উম্মাহর প্রেরনা। যিনি অর্থবৃত্তে ধনী অথবা দুনিয়ার ক্ষমতারশালী কোন ব্যাক্তিও ছিলেন না। কিন্তু এমন সৌভাগ্য জীবনের অধিকারী তিনি হলেন সারা পৃথিবীর অসংখ্য মানুষ শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার গায়েবানা জানাজায় অংশ গ্রহণ করেছে। কেয়ামত পর্যন্ত কোটি মুসলমান তার জন্য দোয়া করতে থাকবে। তাহাজ্জুতে চোখের পানিতে জায়নামাজে ভাসাবে। এমন গৌরবের মৃত্যু কতজনের ভাগ্যে জোটে!! আর এদেশের মানুষ অনেক জাতীয় নেতার মৃত্যুও দেখেছে, ভালো করে জানাযা পড়ার লোকও আসেনি। আইন করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আকড়ে থাকা যায়, স্যাল্যুট আদায় করা যায়, কিন্তু মানুষের ভালবাসা অর্জন করা যায় না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজ খোজ নিয়ে দেখবেন কি, যে কারাগার আপনি আব্দুল কাদের মোল্লাকে বছরের পর বছর আটকে রেখেছিলেন, সেই কারাগারের কর্তৃপক্ষ যাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন মোল্লা সাহেবের খেদমত কারার জন্যে তাদের অনুভ’তির কথা। আবাক হয়ে যাবেন এই মানুষ গুলোর কথা শুনলে! আপনি আবাক হবেন তাদের কান্না দেখলে! কাদের মোল্লার প্রতি তাদের শ্রদ্ধা আর ভালবাসা দেখলে! আমি কারাগারে কিছু দেখে এসেছি। আব্দুল কাদের মোল্লাকে যেদিন কাশিমপুর থেকে ফাসির রায় কার্যকরের জন্য ঢাকা আনা হয়েছে, সেদিন পৃথিবীবাসীর সাথে অসংখ্য হাজতি-কয়েদী নির্ভাক হয়ে চোখের পানি ঝরিয়েছে। এমন নি:স্বার্থ ভালবাসা কয়জনের ভাগ্যে জোটে? আব্দুল কাদের সাহেবের কারা সঙ্গীরা তার মৃত্যুর বেদনায় এখন কাতরাচ্ছে! চাদা তুলে গোসত বিতরণ করে তার জন্য দোয়া করছে।
কিন্তু বেদনার হচ্ছে আব্দুল কাদের মোল্লার সন্তানেরা আর আব্বা বলে কাউকে ডাকতে পারবেনা। সহধর্মীনী আর স্বামী ফিরে পাবেনা। কিন্তু চোখের পানি কি বৃথা যাবে? বায়তুল্লাহর পবিত্র গেলাপ ধরে রোনাজারি, আর সারা পৃথিবীর ব্যাপি আহাজারি ফরিয়াদ কথা বলবে। আমরা আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানাই, তার স্ত্রী ছেলে-মেয়ে যেভাবে ধের্য্যের পাহাড় রচনা করেছে তার বিনিময়ে আল্লাহ যেন তাদের কে জান্নাতে একসাথে থাকার সুযোগ করে দেন। কারণ শহীদেরা ৭০ জন পর্যন্ত সুপারিশ করে জান্নাতে নিতে পারবে। শহীদ পরিবারের জন্য এটি মাবুদের পক্ষ থেকে সুসংবাদ।
”আন্তর্জাতিক সংস্থা ও পরিবারের দাবি : বিচার বিভাগের ঘাড়ে বন্দুক রেখে কাদের মোল্লাকে হত্যা করা হয়েছে-
এমনই মন্তব্য করেছেন কাদের মোল্লার আইনজীবী, পরিবারের সদস্য, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহল ও বিভিন্ন সংস্থা। কথিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গত বছর ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদন্ড হলেও শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আইন সংশোধন করে আপিল করে সরকার। আপিল বিভাগের দ্বিধাবিভক্ত রায়ের ভিত্তিতে গত ১৪ ডিসেম্বর রাতে তড়িঘড়ি করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় হওয়ার পর থেকেই জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও সংস্থা রায়ের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে তা কার্যকর করা থেকে সরকারকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের কথিত অভিযোগে আটক, বিচার প্রক্রিয়া, সরকার পক্ষের অনুসন্ধান ও তথ্য-প্রমাণ, তদন্ত কর্মকর্তা ও সরকারি আইনজীবীদের আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্প্ক্তৃতা, বারবার আইন সংশোধন করে ফাঁসির উপযোগী করা, অপরাধ নয় আওয়ামী লীগ ও শাহবাগিদের দাবিই বিচার্য বিষয় হিসেবে সাব্যস্ত করা, সাক্ষী নিয়ে সরকার পক্ষের লুকোচুরি খেলাসহ ফাঁসির রায় আদালতে সরকার পক্ষের জবরদস্তিমূলক আচরণে বিচারের মানদন্ড নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা।
ফরিদপুরের আবদুল কাদের মোল্লাকে মিরপুরের কুখ্যাত কসাই কাদের রূপ দিয়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর পর আইনজীবীরা আদালত ও সরকার পক্ষের কাছে যেসব প্রশ্ন করেও কোনো উত্তর পাননি সেগুলো হলো- আদালতে মোমেনা পরিচয় দিয়ে যে মহিলা কাদের মোল্লার বিপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন তিনি একাত্তরে নির্যাতিতা ও স্বজন হারানো মোমেনা নন। প্রকৃত মোমেনা আদালতে সাক্ষ্য দিতেই আসেননি। মিরপুরের ‘কসাই কাদের’ ও ফরিদপুরের মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডারের বাসায় থাকা কাদের মোল্লা এক ব্যক্তি নন। কাদের মোল্লা যদি মিরপুরের বহুল আলোচিত ‘কসাই কাদের’ হন তাহলে তিনি কি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলে থেকে পড়া লেখা করে ৭১ সালে পাস করে বের হন? মেধাবী ছাত্র হিসেবে স্বীকৃতির পর কি করে সরকার তাকে ওই বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে উদয়ন স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ দেন? মাত্র এক বছর পর প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার মর্যাদায় তাকে কি করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক পদে চাকরি দেয়া হয়? কোনো সাক্ষীই নিজ চোখে আবদুল কাদের মোল্লাকে একাত্তরে অপরাধ করা তো দূরের কথা, মিরপুর এলাকাতেই দেখেননি। শোনা কথার ভিত্তিতে ও ধারণামূলক বক্তব্যের ভিত্তিতে কাউকে ফাঁসি দেয়া যায় কি? এসব প্রশ্নের জবাব এখনও পাওয়া যায়নি।
বিচারকদের নিয়ে প্রশ্ন-আপিল বিভাগের বিচারপতি এসকে সিনহা ও শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বিরুদ্ধে বিচারের শুরুতেই আপত্তি পেশ করেন কাদের মোল্লার আইনজীবীরা। আলোচিত স্কাইপ কথপোকথন থেকে জানা যায় যে, বিচারপতি এসকে সিনহা বিচারবহির্ভূতভাবে জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দেয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের প্রভাবিত করেন। তিনি ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমকে ফাঁসির রায় দেয়ার বিনিময়ে আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেয়ারও আশ্বাস দেন। স্কাইপ কথোপকথনের মাধ্যমে প্রকাশিত বিচারপতি এসকে সিনহার এ ভূমিকার কথা স্বীকার করেছেন বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম। সেই সঙ্গে এ কথোপকথন প্রভাবশালী ম্যাগাজিন দি ইকোনোমিস্ট-এ প্রকাশ করে। প্রসঙ্গত, সেনা সমর্থিত ওয়ান ইলেভেন সরকারের আমলে পদত্যাগের জন্য বঙ্গভবনে চায়ের দাওয়াত পেয়েছিলেন এ বিচারপতি। অপরদিকে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক জামায়াত নেতাদের ফাঁসির দাবিতে সভা-সমাবেশও করেছেন। জামায়াত নেতাদের ফাঁসির দাবিতে লন্ডনে অনুষ্ঠিত একটি আলোচনা সভায় তিনি বক্তব্যও দিয়েছেন। যা বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। এসব ঘটনা উল্লেখ করে আপিল বিভাগে আপত্তি দেয়ার পরও বিচার কাজে অংশ নেন আলোচিত এ দুই বিচারপতি। আইনজীবীরা বলেন, প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী একজন বিচারককের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখপূর্বক ন্যায় বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা করে আবেদন করলে সেই বিচারক নিজ থেকেই সরে পড়েন। ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় সংসদ ভবনের বিশেষ কোর্টে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচারের সময়ও আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা সংশ্লিষ্ট বিচারকের প্রতি ন্যায় বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করে অনাস্থা আবেদন করেছিলেন। বিচারক তাৎক্ষণিকভাবেই বিচারকাজ থেকে সরে দাঁড়ান। সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে অনাস্থা দেয়ার পরও বিচারপতি এসকে সিনহা ও বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আপিল বিভাগে কাদের মোল্লার আপিল শুনানিতে অংশ নেন। পরে আপিলের রায়ে দেখা যায় যে, এই দুজনই কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের পক্ষে মত দেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, কাদের মোল্লা শুধু ন্যায় বিচার থেকেই বঞ্চিত হননি। হত্যার শিকারে পরিণত হয়েছেন।
মিরপুরের কসাই কাদের আর ফরিদপুরের কাদের মোল্লা এক ব্যক্তি নন-ফদিরপুরের কাদের মোল্লা আর মিরপুরের কসাই কাদের এক ব্যক্তি নন। তথ্য প্রমাণসহ আইনজীবীরা এ দাবি করেন। হাসবে মিরপুরের কসাই কাদের-‘আমি ফরিদপুরের কাদের মোল্লা। সরকার আমাকে প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে হত্যা করতে যাচ্ছে। আমার হত্যাকান্ডের পর আমি কিয়ামত পর্যন্ত কাঁদতে থাকব। আর হাসবে মিরপুরের কসাই কাদের’। কথাগুলো আবদুল কাদের মোল্লার। আওয়ামী লীগ নেতা ও সংসদ সদস্য গোলাম মওলা রনির মাধ্যমে জাতির উদ্দেশে দেয়া একটি ছোট্ট চিঠিতে এমন অনুভূতিই প্রকাশ করেছিলেন কাদের মোল্লা। সরকার তাকে মিরপুরের কুখ্যাত কসাই কাদের সাজিয়ে হত্যা করতে যাচ্ছে এমন কথাই বলেছেন তিনি। গোলাম মওলা রনি তার এ চিঠিটি ফেসবুকে ছেড়ে দেয়ার পর বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায় তা। (সুত্র:দৈনিক আমার দেশ) কাদের মোল্লা আর কসাই এক ব্যাক্তি নন। এমন বক্তব্য দিয়ে মিডিয়ায় জড় তুলেছেন আওয়ামীলীগের সাংসদ গোলাম মাওলা রনি। এমন সত্য উপলদ্ধির জন্য তাকে সাধুবাদ জনাই।
শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা ভাইয়ের সাথে অসংখ্য স্মৃতি আজ নাড়া দেয় প্রতিনিয়ত। ২০০৯ সালে আব্দুল কাদের মোল্লা ভাই সৌদির সরকারের রয়েল গেস্ট হিসেবে আর আমি ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রিয় সভাপতি হিসেবে পবিত্র হজ্জ পালন করতে যাই। মোল্লা ভাইয়ের সাথে মদিনায় সাক্ষাৎ। তার সফর ছিল সংক্ষিপ্ত। তাই মদিনায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে একটি মতবিনিময় অনুষ্ঠানে মোল্লা ভাই ছিল প্রধান অতিথি আর আমি ছিলাম বিশেষ অতিথি। অনুষ্ঠানে আমি যখন সারাদেশে আমাদের ভাইদের উপর জুলুম নির্যাতন এবং শহীদ ভাইদের ঘটনা বর্ণনা করছিলাম তখন উপস্থিত সবাই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে। আমি মোল্লা ভাইকে অনেকবার চোখের পানি মুছর্তে দেখেছি। আলোচনায় তিনি বললেন” বাংলাদেশে শিবিরের যুবক-তরুনেরা জীবন দিচ্ছে দ্বীনের জন্য। সুতরাং আপনারা শুধু দান খয়রাত করলে মুক্তি পাবেননা। কারণ আপনারা এমন জায়গায় আছেন যেখানে রাসুল স: শুয়ে আছেন। বদর, উহুদ সব এখানেই। সুতরাং দ্বীনের পথে ত্যাগ কুরবানী ছাড়া আমাদেও মুক্তি মিলবেনা।” আজ তিনি নিজেই সারা পৃথিবীর মুসলিম উম্মাহর কাছে একটি প্রেরণা, একটি ইতিহাস, এই দুঃসাহসিক দূর্জয় পথে দূরন্ত সাহস।
শাহাদতের জন্য মোল্লা ভাইয়ের মন কেমন পাগলপারা ছিল এই ঘটনা থেকে তা উপলদ্ধি করা যায়। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টন ট্রাজেডি প্রতি বছরই এই দিবসটি অত্যন্ত মর্যাদার সাথে পালন করা হয়। পৃথিবী যতদিন থাকবে ততদিনই সবাই কাদবে আওয়ামীলীগ বৈঠার আঘাতে যারা শহীদ আর গাজী মর্যাদায় ভ’ষিত হয়েছে তাদেও জন্য। আর খুনিরা কেয়ামত পর্যন্ত মানবতার অভিশাপ পেতে থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। খুব সম্ভব ২০০৯ সালের ২৮ অক্টোবর ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ইসলামী ছাত্রশিবির আয়োজন করে আলোচনা সভার। সকল অতিথির বৃন্দ উপস্থিত আলোচনা সভা শুরু হয়ে গেছে। ঠিক মাঝখানে আমাদের প্রিয় মোল্লা ভাই প্রোগ্রামে এসে হাজির। আমি দাড়িয়ে রিসিভ করে বললাম সরি মোল্লা ভাই আপনি আসছেন এজন্য মোবারকবাদ। কারণ মোল্লা ভাই আমাদের দাওয়াতি মেহমানের মধ্যে ছিলেন না। তবু তিনি নিজ উদ্যোগে আলোচনা সভায় হাজির হয়েছেন। বলতে না বলতে তিনি বললেন, শুন ২৮ অক্টোবর ২০০৬ আমি ঐ প্রোগ্রামে অনুপস্থিতির বেদনা আমাকে সব সময় তাড়িয়ে বেড়ায়। পল্টনে আমি উপস্থিত থাকতে পারিনি। যেখানে আমাদের ভাইদের শহীদ আর গাজী হয়েছে। ঐ দিন আমি ঢাকায় ছিলাম কিন্তু আমীরে জামায়াত আমাদের কেন্দ্রিয় অফিস থেকে সব খোজ খবর রাখতে বললেন। এই জন্য আমি পল্টনে ছিলামনা। সেদিনের এই অনুপস্থিতির বেদনা থেকে তোমাদের দাওয়াত না পেয়েও বেদাওয়াতে এখানে উপস্থিত হয়ে গেলাম। এই কথাগুলো মোল্লা ভাই স্টেইজে বসে বসে বললেন। তখন বুঝতে পারিনি কিন্তু আজ সারা পৃথিবী জানে তিনি কত গভীর ভাবে শাহাদাতের চেতনাকে লালন করতেন। মোল্লা ভাইয়ের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মোল্লা ভাই আল্লাহর দরবারে তার মৃত্যু যেন বৃহস্পতিবারে হয় তার কামনা করতেন। আর তার নামাজে জানাজা যেন তাহাজ্জুতের সময় হয়। বলুন তো আবেদন শুনে আমার কাছে জটিলই মনে হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা এই প্রিয় বান্দার সেই ফরিয়াদ ও কবুল করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ। এই সরকার তার ফাসি প্রথম দিন ১১ ডিসেম্বর কার্যকর করতে চেয়েছিল কিন্তু তা আদালতের নির্দেশের কারণেই হয়নি। কিন্তু তার ফাসি ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবারই হয়েছে। আল্লাহ তার প্রিয় বান্দার ফরিয়াদ অনুসারে বৃহস্পতিবার রাত ১০.০১ মি: বান্দার ফরিয়াদ কবুল করে শাহাদাদের অমিয় সুধা পান করালেন।
দ্বিতীয়ত জানাজার নামাজ প্রশাসন ফরিদপুরে ৫.০০টার সময় ঠিক করেছে। কিন্তু শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার কাফিন আগেই পৌছে যাওয়ায় তার নামাজের জানাজা ৪.০০টার সময় অনুষ্ঠিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলার তার প্রিয় বান্দার ফরিয়াদ অনুসারে তাহাজ্জুতের সময়েই তাকে মাবুদের সান্নিধ্যে তুলে নিলেন। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার ভাই সত্যেই শাহাদাতের জন্যই তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন।
এই জালেম সরকার তার পরিবারকে মোল্লা ভাইয়ের কফিন শেষবারের মত দেখতে সুযোগ দিল না। অংশগ্রহণ করতে দিল না তার জানাজায়। মোল্লা ভাইয়ের ফাসির পর পরই তার পরিবার আতœীয় স্বজন যখন মগবাজারের বাসা থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানার জন্য বের হয়েছে ঠিক তখনি ছাত্রলীগ,যুবলীগ পুলিশ একযোগে তাদের বাসার সামনে গাড়ির বহরে হামলা চালিয়ে আহত করে অনেককেই। শুধু তাই নয় পুলিশ আহত দের উল্টো গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। এভাবে চলতে থাকতে গভীর রাত পর্যন্ত। এতে শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা ভাইয়ের স্ত্রী, সন্তান, আত্বীয়-স্বজন কেউ-ই শেষ বারের মত আর তাকে দেখতে পেলনা। মানুষ কত নিষ্ঠুর, কত পাশান, কতটুকু পশুর মত হলে এমন আচরণ করতে পারে? কিন্তু এমন অবস্থায়ও মোল্লা ভাইয়ের সহধর্মীনীর ধৈর্য্য আমাকে হতবাক বানিয়ে দিল! বাসায় হামলার ঐ মুহুর্তে আমি ফোন দিলাম ভাবীকে উনারা ফরিদপুরে যাবেন কিনা, কারণ গাড়ি তদারকির দায়িত্ব আমার ছিল। উত্তরে অবিচল স্বাভাবিক কন্ঠে আমাকে বললেন, এই পরিস্থিতি আমি ছোট বাচ্চা, ছেলেমেয়েদের নিয়ে নিরাপত্তা হীনতার মধ্যে যাবো কিভাবে? যরা আমাদেও নিরাপত্তা দেয়ার কথা বলেছে তারা আমাদেও উপর হামলা করছে। যাকে আল্লাহ কবুল করার সেতো চলে গেছে এখন আর যেয়ে কি হবে? তিনি স্বাভাবিক কণ্ঠে এই কথাগুলো বলছেন আর আমি চোখের পানি মুছতেছি। আর ভাবছি আল্লাহ যাকে ধের্য্য দান করেছেন শুধু তারাই ধৈর্য্যধারণ করতে পারে। নচেৎ এমতাবস্তায় সবর করা কঠিন নয় কি?
সত্যিই, জনাব আব্দূল কাদের মোল্লাসহ আল্লাহর দ্বীনের মুজাহিদদের ঈমানী দৃঢ়তা দ্বীনের পথিকদেরকে উৎসাহিত করছে। জনাব আব্দুল কাদের মোল্লা ভাইয়ের মৃত্যু পরওয়ানা জারি করার পরও কিন্তু দ্বীনের এই মুজাহিদকে এতটুকু হতাশাও আচ্ছন্ন করতে পারেনি, আলহামদুলিল্লাহ। এই জাতীয় সাহসী বীর মুজাহিদ এখন মাওলানা মওদুদী, সাইযেদ কুতুব, আর হাসান আল বান্নার কাতারে দন্ডায়মান। দ্বীনের পথে সংগ্রামরত বিশ্বেও অসংখ্য মুজাহিদেও জন্য এগিয়ে যাবার প্রেরনা। শাহাদাতের রাতে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের জনাব আবদুল কাদের মোল¬া তার স্ত্রী পুত্র, মেয়ের কাছ থেকে এভাবেই শেষ বিদায় নিয়েছিলেন, ”আমি তোমাদের অভিভাবক ছিলাম। এ সরকার যদি আমাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে, তাহলে সেটা হবে আমার শাহাদাতের মৃত্যু। আমার শাহাদাতের পর মহান রাব্বুল আলামীন তোমাদের অভিভাবক হবেন। তিনিই উত্তম অভিভাবক। সুতরাং তোমাদের দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। ইসলামী আন্দোলনকে বিজয়ী করার মাধ্যমে আমার হত্যার প্রতিশোধ নিও। শুধুমাত্র ইসলামী আন্দোলন করার অপরাধেই আমাকে হত্যা করা হচ্ছে। শাহাদাতের মৃত্যু সকলের নসিবে হয় না। আল¬াহতায়ালা যাকে শহীদী মৃত্যু দেন সে সৌভাগ্যবান। আমি শহীদী মৃত্যুর অধিকারী হলে তা হবে আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। আমার প্রতিটি রক্তকণিকা ইসলামী আন্দোলনকে বেগবান করবে ও জালেমের ধ্বংস ডেকে আনবে। আমি নিজের জন্য চিন্তিত নই। আমি দেশের ভবিষ্যৎ ও ইসলামী আন্দোলন নিয়ে চিন্তিত। আমি আমার জানামতে কোন অন্যায় করিনি।
পরিবারের সদস্যদের তিনি আরও বলেন, তোমরা ধৈর্যের পরিচয় দেবে। একমাত্র ধৈর্য ও সহনশীলতার মাধ্যমেই আল্লাহ তায়ালার ঘোষিত পুরস্কার পাওয়া সম্ভব। দুনিয়া নয়, আখেরাতের মুক্তিই আমার কাম্য। আমি দেশবাসীর কাছে আমার শাহাদত কবুলিয়াতের জন্য দোয়া চাই। দেশবাসীর কাছে আমার সালাম পৌঁছে দিও। বিদায় বেলায় স্ত্রীর সঙ্গে শেষ কথা বলেন তিনি, ‘ধৈর্য ধরো, আল¬াহর ওপর ভরসা রেখো। তোমার হক যথাযথভাবে আদায় করতে পারিনি বলে ক্ষমা করে দিও।’ প্রতি উত্তরে স্ত্রী বলেছেন- ‘দীর্ঘদিন কারাবন্দি থাকায় আপনার সেবা করতে পারিনি। বিদায় বেলায়ও পাশে থাকতে পারছি না। জীবন চলার পথে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় কোন অন্যায় হয়ে থাকলে মাফ করে দিবেন।’ এ সময় খানিকটা আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হলেও কাদের মোল্লা ছিলেন দৃঢ়, অবিচল” এই দৃঢ় চিত্ততা কেবল আল্লাহর উপর ভরসাকারী ঈমানদারগনই দেখাতে পারেন। কারণ তারা জান্নাতের মিনিময়ে দুনিয়ার সব বিসর্জন দিতে পাওে অত্যান্ত ঠান্ডা মাথায়। হযরত উম্মে হারেসা বিনতে সারাকা থেকে বর্ণিত, “তিনি হুজুর (সা.) এর দরবারে এসে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনি কি হারেসা সম্পর্কে কিছু বলবেন না? জঙ্গে বদরের পূর্বে একটি অজ্ঞাত তীর এসে তাঁর শরীরে বিঁধে যায় এবং তিনি শহীদ হন। যদি তিনি জান্নাতবাসী হয়ে থাকেন তাহলে আমি সবর করবো, অন্যথায় প্রাণ ভরে কাঁদব। হুজুর (সা.) জবাব দিলেন, হারেসার মা, বেহেশতে তো অনেক বেহেশতবাসীই রয়েছেন, তোমার ছেলে তো সেরা ফেরদাউসে রয়েছেন।”
সারা পৃথিবীতে আজ মুসলমানরা নির্যাতিত। বিশেষ করে আজ জামায়াত ও ইখওয়ান এই দুটি আন্দোলন সবচেয়ে বেশী মজলুম। উভয় সংগঠনই কঠোর পরীক্ষা ও প্রতিকূলতার বিভিন্ন মনজিল অতিক্রম করেছে। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, দুনিয়াতে হকের বিজয়ের জন্য যখনই কোন ব্যক্তি বা দল সাহসিকতার সাথে মাথা উচু করেছে তখনই তাদেরকে এসব মনজিল অতিক্রম করতে হয়েছে। ইখওয়ানের প্রথম মুর্শিদে আমকে তার পূর্ণ যৌবনে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে যেরুপ নির্দয় ও হৃদয়বিদারক ভাবে হত্যা করা হয়। আবদুল কাদের আওদা শহীদ ও তার সংগীদেররক ১৯৪৫ সালে ফাসিতে ঝুলানো হয়েছে। এসব অমূল্য জীবনের অকাল পরিসমাপ্তি শুধুমাত্র নীল উপত্যকারই ক্ষতি হয়নি সমগ্র মুসলিম উম্মাহ অদ্যাবধি এ ক্ষতির জন্য তড়পাচ্ছে। বাংলাদেশে ও হয়ত একদিন শহীদ আব্দুল কাদেও মোল্লার মৃত্যু নিয়ে অনেক অনুশোচনা করবে।
বাংলাদেশে ইসলামী ও আন্দোলন একটি কঠিন সময় অতিক্রম করছে। এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু বর্তমান প্রবাহ আমাদের জীবনে নতুন হলেও আন্দোলনে তা অনেক পুরাতন। কুরআন, হাদীস, রাসূলের সিরাত, সাহাবীদের জীবনী অধ্যয়ন করলে আমাদের সামনে সেই ইতিহাস প্রস্ফুটিত হয়। কিন্তু খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে ১৯৮২ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী বামদেও হামলায় নবীন বরণে ছাত্রশিবিরের ৩ জন শাহাদাত আর অসংখ্য আহত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে ১৫ই মার্চ সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকায় শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা “শোক করিয়া লাভ নাই, শহীদি খুনের নজরানা চাই” এই শিরোনামে লিখেছিলেন -”আমি কিন্তু এত হিং¯্রতা, এত নিষ্ঠুরতা, এতটা অমানবিক আচরণে মোটেই বিস্মিত হই নাই। তিনজন শহীদের জন্য শোক করারও তেমন কিছু দেখিনা। বরং অত্যন্ত প্রসান্ত চিত্তে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করিয়া দেখিয়াছি, আমার মনে হইয়াছে ঘটনা অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবেই অগ্রসর হইতাছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের পশুত্বের বিরুদ্ধে মানবতার অমানুষদের বিরুদ্ধে মানুষের সর্বোপরি কুফুরীর বিরুদ্ধে ইসলামের সংগ্রামের ইতিহাসের এই ভাবেই রক্তের অক্ষরে লেখা। কোন নবীই এই পথ এড়াইতে পারেন নাই, কোন মুজাদ্দিদের জন্যই ভিন্ন পথ ছিলনা। কোন ইমাম ও অন্য প্রকার পুস্প আচ্ছাদিত পথের কথা চিন্তাও করেন নাই। সুতরাং এই যুগেও যাহারা ঐ একই পথের যাত্রী বলিয়া দাবী করেন তাহাদের পথ ভিন্নতর কিছু হইবে কেমন করিয়া। ইসলামের গোটা ইতিহাস পর্যালোচনা করিলে যেন আমার মনে হয় ইসলাম নামক শ্যামল সতেজ গাছের রং সারের অভাবে যখনই ফিকাব পিন্টল হইয়া গিয়াছে তখনই শহীদের তাজা রক্তের সার দিয়া গাছটিকে আরো তরতাজা করিয়া ফুলে ফলে সুশোভিত করা হইয়াছে। সুতরাং ভয়ের কিছু নাই। শঙ্কার কিছু নাই। আক্ষেপেরর কিছু দেখতেছিনা বরং দিব্যদৃষ্টিতে যেন দেখতেছি এই দেশেই ইসলামের কালেমা খচিত বিজয়ী মিনারের চুড়ায় পতপত করিয়া উড়িতেছে।” যিনি এমন ঐতিহাসিক কথাগুলো লিখেছেন তিনি নিজেই আজ বিশ্বের খবরের পাতায় শিরোনাম। তিনি নিজেই তার জীবন উৎসর্গ করা সত্যেও সাক্ষী হয়ে গেলেন আজ।
শহীদেরা তাদের মাবুদের সাথে তামাম জিনিসের বিনিময় করে শুধু একটি বাক্যের ভিত্তিতে ‘‘রাদিয়া আল্লাহু আনহুম অরাদু আন্হ’’। যারা এই মহৎ কাজে নিজেদের জান-মাল, পিতা, পুত্র, ভাই বেরাদর, স্ত্রী ও আত্মীয়স্বজনের মায়া এবং ঘরের আরাম-আয়েশ, বিলাস ব্যসন সবকিছুই বিসর্জন দিতে পারে, তাদের চেয়ে বেশি আল্লাহর ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি লাভের অধিকারী আর কে? সাফল্য ও বিজয়ের সিংহদ্বার তাদের জন্য ছাড়া আর কার জন্য উন্মুক্ত হতে পারে? তাদের শক্তির উৎস অনেক গভীর থেকে প্রথিত । ১৮৮২ সালে শহীদ দিবস উপলক্ষে লিখেছেন:- মানুষকে যদি মানুষের মত বাচিতে হয় তাহা হইলে এই মানুষ খেকো আদর্শকে দুনিয়ার প্রতিটি প্রান্ত হইতে চিরতরে উৎখাত করিতে হইবে, নির্মূল করিতে হইবে। এই রক্তপিপাসু অনুসারিদের বিরুদ্ধে দুনিয়ার প্রতিটি প্রান্তে গড়িয়া তুলিতে হইবে প্রতিরোধ। বাংলার প্রতিটি জনতাকে এই বন্য আদর্শের আসল চেহারা আর অনুসারীদের আসল চরিত্র বুঝাইতে হইবে। দেশকে বাচাইতে হইলে সর্বোপরি ঈমান আকিদা লইয়া বাচিতে চাহিলে বলিষ্ঠ প্রত্যয়ের সাথে সিদ্ধান্ত লইতে হইবে। ঈমান-দার প্রতিটি মানুষকে আজ অগ্রণী ভ’মিকা পালনের জন্য প্রস্তুত হইতে হইবে। অন্যথায় শুধু বুক চাপড়াইয়া শহীদদের জন্য শোক করিয়া কোন লাভ নাই। আজ গজলের একটি কলিগুলি বড় আবেগে-আপ্লুত কণ্ঠে গাহিতে ইচ্ছা করিতেছে- “তোরি দেশের বাকে বাকে
লক্ষ্য শহীদ আজো ডাকে
তবুও কি তুই রইবি বেহুশ
আজি একথার জবাব যে চাই”
জবাব দিতে হইলে মুখের কথায় অথবা মিটিং মিছিল আর প্রতিবাদ সভায় কাজ হইবে না। ঈমানের আলোতে প্রজ্বলিত বক্ষের তাজা শহীদি খুনের নজরানা চাই।” আজ জীবিত আব্দুল কাদেও মোল্লার চাইতে শহীদ আব্দুল কাদেও মোল্লা অনেক বেশী শক্তিশালী। জেল-জুলুম-নির্যাতন,হত্যা,গুম,খুন চালিয়ে ইসলামী আন্দোলনকে স্তদ্ধ করা যায়না, বরং দ্বীনের বিজয় অনিবার্য হয়ে উঠে। যারা আব্দুল কাদেও মোল্লাকে হত্যা করেও এদেশকে কলোনীভ’ক্ত করা স্বপ্ন দেখছে, শহীদদেও রক্তের শপথ নিয়ে বাংলার তৌওহীদি জনতা তা রুখে দাঁড়াবে ইনশাল্লাহ। হে আরশের মালিক তুমি শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লাসহ সকল শহীদদেরে শাহাদাতের সবোচ্চ মর্যাদা দাও। তাদের ত্যাগের মিনিময়ে এই জমিনকে দ্বীনের জন্য কবুল করো, আমাদেরকে তাদের দেখানো পথে কবুল করো। ইহকালের একই কাফেলায় আমরা যেমনি ছিলাম, জান্নাতেও তেমনি থাকার তাওফিক দিও। আমীন
লেখক- ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম
03 Feb 2014
mrkarim_80@yahoo.com