এবার দুর্বৃত্তদের হাতে আহত তাইওয়ানের দুই নাগরিক ||

এবার রাজধানীর উত্তরায় দুর্বৃত্তদের হাতে আহত হয়েছেন দুই বিদেশি নাগরিক। তবে পুলিশের দাবি অর্থ লুটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ নেই। আহত দুই বিদেশি তাইওয়ানের নাগরিক এবং তারা স্বামী-স্ত্রী। তারা গত ১০ বছর ধরে ঢাকায় বসবাস করে আসছিলেন। তাদের গাজীপুরে একটি প্লাইউডের কারখানা রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটলেও রাত আড়াইটার দিকে এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হয় আজ শুক্রবার বিকেলে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছে, তাদেরকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। তবে পুলিশের দাবি লাঠির আঘাতে তারা আহত হয়েছেন।

আহত দুই বিদেশি নাগরিক হলেন- ওয়াং মি চি (৬৫) ও তার স্ত্রী লি লি হাওয়া (৪৮)।

বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর সড়কের ৮ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে। আজ বিকেলে বিষয়টি জানাজানি হয়। আহতরা গাজীপুরে প্লাইউডের ব্যবসা করেন।

পুলিশের দাবি, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জেরে তাদেরই এক কর্মচারি এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। এসময় তারা ওই বাসা থেকে ছয় লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। আহতদের বারিধারার অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে আটক করেছে উত্তরা মডেল থানা পুলিশ। আটকৃত ব্যক্তির নাম মো. জাহাঙ্গীর।

পুলিশ জানায়, গাজীপুরের বড়বাড়ি এলাকায় অবস্থিত জিং জিন ইয়াং ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্লাইউডের কারখানার মালিক ওই দম্পতি।

পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে কাজ সেরে গাজীপুরের গাছা এলাকার কারখানা থেকে উত্তরার বাসায় ফেরেন ওই দম্পতি। এর আগে ওই দিন ব্যাংক থেকে ছয় লাখ টাকা তোলেন ওয়াং মি চি। রাতে ওয়াংয়ের সাবেক কর্মচারি জাহাঙ্গীর ও তার দুই শ্যালক বাসায় আসে। তারা বাসা থেকে টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এতে বাধা দেয়ায় ওয়াং মি চি ও তার স্ত্রী লি লি হাওয়াকে লাঠি দিয়ে মারধর করে জাহাঙ্গীরসহ তার সহযোগীরা। পরে তাদের আর্তচিৎকারে প্রতিবেশিরা গিয়ে তাদের বাসা থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। লাঠির আঘাতে তাদের মাথায় ক্ষতের সৃষ্টি হয়।

আহতরা অ্যাপোলো হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. আলিমুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ওয়াং চি মিকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি লেভেল ৩-জি এর আইসিইউতে ভর্তি আছেন। অপরদিকে তার স্ত্রী ভর্তি আছেন লেভেল ৭০ এ। ওয়াং চি মি’র অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) বিধান ত্রিপুরা সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় জড়িত জাহাঙ্গীর নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। তিনি হামলায় অংশ নিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছেন। তার সাথে ছিলেন আরো দুজন। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।

ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার ডিসি মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, আটক হওয়া জাহাঙ্গীর একসময় তাইওয়ানের ওই ব্যবসায়ীর কর্মচারি ছিলেন। পরে চাকরি ছেড়ে তিনি ওই কারখানায় কাঁচামাল সরবরাহের কাজ শুরু করেন। সে কারণে ওয়াং মি চির উত্তরার বাসায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল জাহাঙ্গীরের। তার কাছে ওই বাসার একটি চাবিও ছিল। ব্যবসার টাকা-পয়সা বকেয়া নিয়ে কিছুদিন ধরে তাদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। তাইওয়ানের ওই ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছেন খবর পেয়ে জাহাঙ্গীর তার আরো দুই সহযোগীকে নিয়ে উত্তরার বাসায় যান। এরপর দম্পতিকে মারধর করে ছয় লাখ টাকা নিয়ে চলে যায়। পরে জাহাঙ্গীরকে আটক করা হয়।

কারখানার জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) হাফিজ জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় কারখানার কাজ শেষে গাজীপুর থেকে উত্তরার উদ্দেশ্যে রওনা হন চেয়ারম্যান ওয়াং মিং ও তার স্ত্রী লি লি।

তিনি বলেন, রাত ১২টায় কারখানার ক্যাশিয়ার তাইওয়ান নাগরিক ম্যাকু আমাকে মোবাইলে জানালে খবর পেয়ে আমি ওই বাসায় যাই। তার কাছ থেকে শুনি রাজু ও সাজু নামে দুই ভাইসহ কয়েকজন ওই স্যারের বাসায় হামলা চালায়।

তিনি বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাদের দু’জনকে উদ্ধার করে পুলিশভ্যানে করেই অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। পরে আমিও হাসপাতালে যাই। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওই দম্পতিকে ধারালো ছুরি দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছে। ওয়াং মিং মাথায় রাতেই অস্ত্র পচার করা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে আইসিউতে রাখা হয়েছে। তার জ্ঞান ফিরতে আরো দু’একদিন সময় লাগতে পারে বলে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জানান হাফিজ।

কারখানা জিএম আরো জানান, রাজু ও সাজু প্রায় পাঁচ বছর ধরে কারখানার সাথে চুক্তি অনুযায়ী প্লাস্টিকের সিলিংবোর্ড ও দরজা প্রিন্টিং করে আসছে। দুই ভাই গাজীপুর মহানগর বড়বাড়ি গাছা এলাকায় থাকতেন। সেখানেই রাজু ও সাজুর প্রিন্টিং-এর কাজ করেন।

তিনি বলেন, অর্ডারকৃত মালামাল কাজ শেষে সাথে সাথেই তাদের টাকা পরিশোধ করা হয়। আজও রাজু তার কর্মচারিদের বেতন দিবেন বলে স্যারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা অগ্রিম বাবদ নিয়ে যায়। পরে রাতেই স্যারে বাসায় এ হামলা চালায়। হাফিজ আরো জানান, স্যার ও তার স্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এ হামলা চালিয়েছে তারা। ওই বাসা থেকে ছয় লাখ টাকা নিয়ে গেছে।

(সংবাদটি গুরুত্বপুর্ণ মনে হলে পেইসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)

Post a Comment

Previous Post Next Post