শহীদ কামারুজ্জামানকে নিয়ে যে চমক লাগানো লেখা লিখলেন তার ছেলে ||

বাবার ক্ষন ও বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন, সাধারণ মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা আর বিরোধী রাজনীতিবিদদের কাছে ব্যক্তি কামারুজ্জামানকে আমি যে ভাবে দেখেছি তার ভাগ্য হয়তো সবার হয়নি। আবার নিজের বাবাকে নিয়ে লেখাও বোধহয় খুব একটা উপযুক্ত অথবা শোভন নয়। তারপরেও লিখলাম। আমার বাবা একজন রাজনীতিবীদ ছিলেন। গতানুগতিক সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে তার একটা ভাবনা ছিলো। ছিলো অনেক স্বপ্ন।

অনেক বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা তাকে সম্মান দিতে কার্পণ্য করেননি তার ব্যক্তিত্ব এবং চিন্তার জন্য। সেটা হোক আমির হোসেন আমু বা মতিয়া চৌধুরী বা সাবের হোসেন চৌধুরী বা জি.এম কাদের। আরো মানুষের নাম নাই নিলাম। আওয়ামী লীগ এর সাথে লিয়ােজা কমিটির বৈঠকগুলো বেশীর ভাগ হতো মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদের বাসাতে। তখন মোবাইলের এতো প্রচলন ছিলো না, বৈঠকে যেতে দেরী হলে সাজেদা চৌধুরী বাসাতে ফোন করতেন এবং মাকে জিজ্ঞাসা করতেন "ভাবী ভাই কোথায়, নাস্তা নিয়ে বসে আছি ভাইতো এখনো এসে পৌছালো না"। এ কথাগুলো আজ না হয় থাকুক।

আমাদের নির্বাচনী এলাকায় কোন ধরনের সমস্যায় প্রথমে আমার বাবার কাছেই সবাই ছুটে আসতেন। কেউ কোনদিন বিচার করেননি উনি কোন ধর্মের বা কোন দলের। আমার স্পস্ট মনে আছে নির্বাচনের প্রচারের সময় আমি এমন কয়েক জনের বাসাতে গিয়ে বাবার জন্য দোয়া চেয়ে আসছি যারা জামায়াতে ইসলামীর ঘোর বিরোধী। তারা এক বাক্যে বলতেন রাজনৈতিক কারনে তোমার বাবার বিরুদ্ধে কাজ করছি ব্যক্তি কামরুজ্জামান আমার বড় ভাইয়ের মতো। তার জন্য অবশ্যই দোয়া করবো। শেরপুর শহরে আমার নানীর বাড়ী। শেরপুরে গেলে আমরা সেখানেই উঠতাম। পাশের বাসাটি হিন্দু জমিদার বংশের, পিসি আর দাদা বুবু থাকেতাে সেটায়। বাবা গেলে একবেলা হলেও খাওয়াতেন। দেবাশীস মামা যিনি কিনা বাবার দলের ঘোর বিরোধি প্রথম আলোর শেরপুর জেলা প্রতিনিধি ছিলেন। কোনদিন বাবার আপ্যায়নে কার্পণ্য করতে দেখিনি। এধরনের হিসেব দিয়ে শেষ করতে পারবোনা।

অনেকে বাবাকে বলতেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে আপনি উপুযক্ত নয়। এখানে রাজনীতির সংজ্ঞাটা ভিন্ন। বাবাকে বলতে শুনেছি, বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে। বাবা মৃদু হাসি দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বলতেন আমারতো চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই, চেষ্টা করে দেখি এই রাজনীতির পরিবর্তন আনা যায় কিনা। কমপক্ষে শুরুতো করে যাই, শেষ করার জন্যতো তো তোমরা আছ। এটা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।

এমন একটি সময় ছিলো যখন দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনে দেশের মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সমাজ একটি ভূমিকা রাখতো। ক্যপিটালিজম এবং কমিউনিজমের আধিপত্য এই মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সমাজ আজ আবেগশূণ্য হয়ে গেছে। আর এটা খুবই আতংকের বিষয়। যানিনা এই পরিবর্তনের কাজের ধারাবাহিকতা শেষ হয়ে যাবে কিনা?

লেখকঃ হাসান ইকরাম ওয়ালী (মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের দ্বিতীয় ছেলে)

(সংবাদটি গুরুত্বপুর্ণ মনে হলে পেইসবুকে লাইক বা শেয়ার করুন)

Post a Comment

Previous Post Next Post