সৌদি আরবের ৩ লাখ প্রবাসী ঝুঁকিতে : আর মাত্র ২৪ দিন ||

আর মাত্র ২৬ দিন পর শেষ হতে যাচ্ছে সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রবাসীদের জন্য চালু হওয়া মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি)-র কার্যক্রম। কিন্তু, সৌদি সরকারের দেওয়া সংখ্যানুযায়ী এখনও এমআরপি করেননি তিন লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি। আর প্রবাসীদের নিজস্ব হিসাব অনুযায়ী এই তালিকার বাইরে থাকা বাংলাদেশির সংখ্যা আরও বেশি। অথচ এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসে পুরনো পাসপোর্ট নিয়ে হাজির না হলে এমআরপি করার সুযোগ চিরতরে হারাবেন সৌদি প্রবাসীরা। ২৪ নভেম্বরের পর এমআরপি পাসপোর্ট না থাকলে উড়োজাহাজে ওঠাও সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় সৌদি প্রবাসীদের ভিসা বাতিল হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ ২৪ নভেম্বরের মধ্যে এমআরপি সম্পন্ন করার জন্য সবাইকে আবারও তাগিদ দিয়েছেন।

চার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এ কার্যক্রম শুরু হয় ২০১১ সালের ২৯ জুন। আগামী ২৪ নভেম্বর শেষ হবে এ কর্মসূচির মেয়াদ।

প্রসঙ্গত আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ (আইসিএএ)’র জারি করা নিয়ম অনুসারে ওই তারিখের পর মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ছাড়া কোনও যাত্রী উড়োজাহাজে ভ্রমণ করার অনুমতি পাবে না।

২৮ অক্টোবর রাতে এমআরপিসংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত জানান, এ পর্যন্ত ১০ লাখ সৌদি প্রবাসীর এমআরপি সম্পন্ন হয়েছে। তবে সৌদি কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যানুযায়ী বর্তমানে ১৩ লাখ বাংলাদেশি সৌদি আরবে অবস্থান করছেন।

বাকি ৩ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশিকে অভয় দিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, এখনও যথেষ্ট সময় আছে, সুযোগ আছে। আপনারা আসুন। আগামী ২৪ নভেম্বরের মধ্যে আপনাদের এমআরপি সহজেই সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।’ একইসঙ্গে তিনি পুরনো পাসপোর্টধারী প্রবাসীদের সতর্ক করে বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসে এমআরপি না করলে এসব প্রবাসীর সৌদি আরবে বৈধভাবে অবস্থান করার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে এসময় উপস্থিত ছিলেন দূতাবাসের হেড-অব-চ্যান্সেরি মো. মনিরুল ইসলাম, প্রথম সচিব খায়রুল আলম ও ফরিদুর রহমান।

মনিরুল ইসলাম এ সময় সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষের এমআরপি সম্পন্নের যাবতীয় তথ্য সংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।

তিনি জানান, প্রতিদিন প্রায় ১৫শ’ প্রবাসীর এমআরপি করার ক্ষমতাসম্পন্ন দূতাবাসের কনস্যুলেট সার্ভিস ভবনে বর্তমানে গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ জনের এমআরপি হচ্ছে। এখন আর আগের মতো ভিড় নেই। তাই বাকিদের এমআরপি এখন সহজেই করা সম্ভব।

তিনি জানান, প্রায় ৯শ’থেকে ১ হাজার পর্যন্ত নতুন এমআরপি প্রত্যেক দিন প্রবাসীদের কাছে হস্তান্তর চলছে। ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত ৩৯ নম্বর সিরিয়াল থেকে শুরু হওয়া ৪১৩৬৯১ সিরিয়ালের প্রায় ২ লাখ ৪৯ হাজার ৯শ’ ৯০টি এমআরপি হস্তান্তরের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। মনিরুল বলেন, সপ্তাহের প্রতি বুধবার ঢাকা থেকে এমআরপি’র কাজ চূড়ান্ত হয়ে দূতাবাসে নিয়মিত আসছে। সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের ওয়েব সাইটে (www.bangladeshembassy.org.sa) এই তালিকা দেওয়া আছে উল্লেখ করে হেড-অব-চ্যান্সেরি মনিরুল ইসলাম বলেন, যে কেউ এই তালিকা থেকে নিজের নম্বর মিলিয়ে দূতাবাসে এলে তার কাছে নতুন মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট হস্তান্তর করা হবে।

এদিকে এমআরপি করতে দিয়ে নির্ধারিত দেড় মাসের মধ্যে পাওয়ার কথা থাকলেও অনেক প্রবাসী তিন-চার মাসেও ডেলিভারি পায়নি এমন ভোগান্তির কথা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিকরা।

এবিষয়ে প্রথম সচিব খায়রুল আলম জানান, জন্মনিবন্ধন জটিলতা এবং পাসপোর্টধারী স্থানীয় ঠিকানায় নানা রকম ত্রুটির জন্য ডেমোগ্রাফি ও ইফিক্সসংক্রান্ত প্রায় ৩ হাজার ৩শ’ প্রবাসীর আবেদনের সংশোধন প্রক্রিয়া চলছে। তবে খুব দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান হবে।

এ সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ জানান, মূলত ঢাকার এমআরপি কার্যালয় থেকে দেরিতে ডেলিভারি হওয়ার কারণেও এসব ক্ষেত্রে প্রবাসীদের কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে। তবে ঢাকা অফিসে আটকে থাকা ডেমোসংক্রান্ত পাসপোর্টের সংখ্যা মাত্র শতকরা ১ ভাগ। এই সমস্যা সমাধানে খুব বেশিদিন বেগ পেতে হবে না।

সরকার সৌদি আরবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আউট সোর্সিং হিসেবে আইরিস কোম্পানিকে নিয়োগ দিয়ে জেদ্দা, দাম্মাম ও রিয়াদে এমআরপি করার জন্য দায়িত্ব দিয়েছে। এ পর্যন্ত তারা কতগুলি এমআরপি সম্পন্ন করতে পেরেছে সে সম্পর্কে বাংলাদেশ দূতাবাস ওয়াকিবহাল নয় জানিয়ে রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ বলেন, সরকার তাদের নিয়োগ দিয়েছে। তাদের এমআরপি’র আপডেট সম্পর্কে মন্ত্রণালয় বলতে পারবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন চ্যানেল, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও প্রিন্ট মিডিয়ার প্রবাসী সাংবাদিকরা।

www.facebook.com/voiceofsenbag

Post a Comment

Previous Post Next Post