বিপুল অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার, ৩ সহযোগীসহ যুবলীগ নেতা গ্রেফতার ||

চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপের ত্রাস, তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী, ডাবল মার্ডারের প্রধান আসামী, যুবলীগ নেতা ফজলে এলাহী মিশু ওরফে মিশনকে তার অন্যতম সহযোগী রুবেল, লুৎফর ও রিয়াজসহ গ্রেফতার করেছে চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাদের দেয়া তথ্যমতে পুলিশ বিপুল অস্ত্র, গুলী, দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে।

মিশু নিজেকে সন্দ্বীপ পৌরসভা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছে। মিশুর গ্রেফতারের খবরে সন্দ্বীপ উপজেলায় জনসাধারণ স্বস্তি প্রকাশ করেছে। স্থানীয়রা জানায়, যুবলীগের সন্ত্রাসী মিশু ও তার বাহিনীর অত্যাচারে সন্দ্বীপে মানুষ শান্তিতে ছিল না। তাদের দাপটে প্রশাসনও তটস্থ ছিল।

পুলিশ সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে খুলনা থেকে গোয়ালন্দ যাওয়ার পথে ডিবি পুলিশ গোপনে খবর পেয়ে মিশুকে তার এক সহযোগীসহ গ্রেফতার করে। শুক্রবার ভোরে তাকে নিয়ে সন্দ্বীপের বাউরিয়া এলাকায় মিশুর গ্রামের বাড়িতে অস্ত্র উদ্ধারে যায় জেলা পুলিশের একটি দল। মিশুর বাড়িতে গেলে তার সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলী চালায়। এ সময় আত্মরক্ষায় পুলিশও পাল্টা গুলী চালায়। এক পর্যায়ে মিশু ডান পায়ে গুলীবিদ্ধ হয়। তবে সে পালাতে পারেনি। পরে পুলিশ ওই এলাকা থেকে মিশুর তিন সহযোগীকে গ্রেফতার ও ঘটনাস্থল থেকে ২টি বিদেশি পিস্তল, ২টি একনলা বন্দুক, ২টি শটগান, ৫টি গুলী ও ৫২টি গুলীর খোসা এবং কয়েকটি কিরিচ উদ্ধার করে। পুলিশ মিশুকে ডান পায়ে গুলীবিদ্ধ অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করেছে। গ্রেফতার অন্য তিনজন হলেন- সন্দ্বীপ পৌরসভা ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত মো. জামশেদের ছেলে মো. রুবেল, একই উপজেলার বাউরিয়া গ্রামের আতাউর রহমানের ছেলে মো. লুৎফর রহমান ও খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার সামন্ত সেনা গ্রামের মো. বাহারের ছেলে মো. মাহাবুব আলম রিয়াজ।

সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, ঈদুল আযহার কয়েকদিন আগে সন্দ্বীপে বাতেন মার্কেট সংলগ্ন পশু বাজারে আধিপত্যকে কেন্দ্র করে গোলাগুলীতে মো: করিব ও জাহাঙ্গীর নামে দুজন সাধারণ মানুষ খুন হয়। ওই ঘটনায় সন্ত্রাসী মিশু ও তার সহযোগীদের আসামী করে মামলা হয় সন্দ্বীপ থানায়। ওই মামলায় মিশুসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মিশু সন্দ্বীপ থানার তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে থানায় ৫টি মামলা খুঁজে পাওয়া গেছে। আরও মামলা থাকতে পারে। তিনি জানান, পশু বাজারে জোড়া খুনের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মিশু ও তার দুই সহযোগীর ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে।

এদিকে গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, টানা ১৭ দিন অভিযান পরিচালনা করে সন্দ্বীপ থানার জোড়া খুন মামলার প্রধান আসামী ফজলে এলাহী মিশু ওরফে মিশনকে তার অন্যতম সহযোগী রুবেল, লুৎফর ও রিয়াজসহ গ্রেফতার করেছে চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। গত ২১ সেপ্টেম্বর সংঘটিত জোড়া খুনের ঘটনার প্রেক্ষিতে সন্দ্বীপ থানায় রুজুকৃত মামলা নং-৬, তারিখ-২২/০৯/২০১৫খ্রিঃ, ধারা-১৪৮/৩৮৫/৩৮০/৩২৬/৩০৭/৩০২/৩৪ দঃ বিঃ এর তদন্তভার জেলা গোয়েন্দা শাখায় হস্তান্তরের পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধীদের গতিবিধি লক্ষ্য রেখে অবস্থান নির্ণয় শেষে শুক্রবার ভোর ৫:৩০টায় তাকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে বাউরিয়া এলাকায় অভিযানে গেলে প্রধান আসামী ফজলে এলাহী মিশু মিশন, পিতা- মোঃ রেজাউল মাওলা, গ্রাম-বাউরিয়া পৌরসভা, থানা-সন্দ্বীপ, জেলা-চট্টগ্রাম গোয়েন্দা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলী ছুঁড়ে। পুলিশ পাল্টাগুলি ছুঁড়লে সে ডান পায়ে গুলীবিদ্ধ হয়। গুলীবিদ্ধ অবস্থায় তাকে গ্রেফতারের পর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বসত ঘরের আলমারি থেকে ২টি ৭.৬২ পিস্তল, ৩ রাউন্ড গুলী, ২টি দেশীয় তৈরি বন্দুক, ২টি শটগান, ৫ রাউন্ড .৩০৩ রাইফেলের গুলী এবং ১০টি বিভিন্ন সাইজের কিরিচসহ দেশীয় তৈরী অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে সন্দ্বীপ থানায় চাঁদাবাজি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে ৫টি মামলা রয়েছে। পরবর্তীতে সন্তোষপুর এলাকা হতে তার অন্যতম সহযোগী রুবেল, লুৎফর ও রিয়াজকে গ্রেফতার করা হয়। উক্ত ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

www.facebook.com/Voiceofsenbag

Post a Comment

Previous Post Next Post