এক কলেজ ছাত্রকে ছয় টুকরো করে হত্যার পর তার লাশ নদীতে ফেলতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ল এক স্কুলশিক্ষিকা। সোমবার রাতে নরসিংদী শহরের গাবতলী এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। খোরশেদ আলম (২৫) নামে এ কলেজ ছাত্রকে কেটে টুকরো করে হত্যা করে ক্বারীফা সুলতানা এ্যামি নামে এক কিন্ডারগার্টেন শিক্ষিকা।
গাবতলীতে এ্যামির ভাড়া বাসায় খোরশেদ আলমকে হত্যার পর তার লাশ ছয় টুকরো করে ঘরের খাটের নিচে লুকিয়ে রাখা হয়। পরে মঙ্গলবার রাতে শহরের সোনাতলা এলাকায় হাড়িধোয়া নদীতে লাশ ফেলতে গিয়ে এ্যামি জনগণের হাতে ধরা পড়ে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, রায়পুরা উপজেলার নিলার গোপীনাথপুর গ্রামের মৃত অহেদ আলীর ছেলে খোরশেদ আলম নরসিংদী শহর এলাকার গাবতলী মহল্লায় ভাড়া বাসায় থেকে নরসিংদী সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে লেখাপড়া করত। এ বছর সে অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র ছিল। পাশাপাশি সে স্থানীয় বেসিক কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতাও করত। সে সূত্রে পরিচয় ঘটে গাবতলী শাখার সানবীম কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিকিা ক্বারীফা সুলতানা এ্যামির সাথে। এ্যামি স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা। পাশাপাশি চাকরি করার সুযোগে এ্যামি আক্তার ও খোরশেদ আলমের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সম্পর্কের সূত্র ধরে প্রায়ই খোরশেদ আলম এ্যামির বাসায় অবাধে যাওয়া আসা করত।
অন্য একটি সূত্র জানায়, এ্যামির সাথে অপর এক যুবকেরও গভীর সম্পর্ক ছিল। সোমবার রাতে কোনো এক সময় এ্যামি পরিকল্পিত ভাবে কলেজ ছাত্র খোরশেদ আলমকে হত্যা করে লাশ ছয় টুকরা করে কম্বল দিয়ে পেঁচিয়ে খাটের নিচে রেখে দেয়। পরের দিন রাতে খোরশেদ আলমের বিচ্ছিন হাত-পা ও মাথাটি পাশের পুরানপাড়া এলাকার হাড়িধোয়া নদীর পাশে ফেলে দেয় এবং মূল দেহটি একটি বস্তায় ভরে কয়েকজন যুবককে সাথে নিয়ে একটি ইজিবাইকে করে সোনাতলা-পুটিয়া এলাকায় একটি ব্রিজের কাছে হাড়িধোয়া নদীতে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন লোকের দৃষ্টিগোচর হলে তারা ইজিবাইকের দিকে এগিয়ে যায়। এ অবস্থায় ইজিবাইকে থাকা তরুণরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। লোকজন কাছে গিয়ে বস্তা দেখে এ্যামিকে জিজ্ঞাসা করে বস্তার ভেতর কী আছে। এ সময় বস্তা থেকে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত ঝরতে দেখে লোকজন বস্তা খুলে মাথা ও হাত-পা বিহীন খণ্ডিত লাশ দেখতে পায়। এ অবস্থায় তারা এ্যামিকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে নরসিংদী সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এ্যামিকে আটক করে লাশের মূল দেহসহ থানায় নিয়ে যায়। থানায় পুলিশ এ্যামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায়, খোরশেদ আলম সোমবার রাতে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে সে বঁটি দিয়ে তার গলায় কোপ মারে। এতে খোরশেদ ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এ অবস্থায় গুম করার জন্য সে পরিকল্পিত ভাবে লাশটি ছয়টি খণ্ডে খণ্ডিত করে হাত-পা-মাথা পুরানপাড়া হাড়িধোয় নদীর তীরে ফেলে দেয় এবং মূল দেহটি সোনাতলা-পুটিয়া এলাকার একই নদীতে ফেলার জন্য নিয়ে যায়। পুলিশ এ্যামির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী খোরশেদ আলমের হাত-পা-মাথা উদ্ধার করে এবং রাতেই তার দেহের সাথে প্রাপ্ত মোবাইল থেকে নম্বর সংগ্রহ করে তার স্বজনদের খবর দেয়। সকালে নিহতের ভাই বেদন মিয়াসহ অপর আত্মীয়স্বজনরা নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করে।
এ ব্যাপারে বেদন মিয়া ক্বারীফা সুলতানা এ্যামিকে প্রধান ও অজ্ঞাত আরো পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করে সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
হত্যাকারী এ্যামির বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর থানার মীরপুর গ্রামে বলে জানা গেছে। তার বাবার নাম গোলাম কিবরিয়া, বর্তমানে তিনি সৌদি প্রবাসী। মায়ের নাম কল্পনা আক্তার। এ্যামির পরিবার দীর্ঘ দিন ধরে নরসিংদী শহরের গাবতলী এলাকায় বসবাস করে আসছে।
এ দিকে এ ঘটনায় গোটা এলাকায় দারুণ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে অন্য কোনো কারণ রয়েছে কিনা তা অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশ। একজন সুঠামদেহী তরুণকে এক মহিলা একাই কিভাবে হত্যার পর তার দেহ টুকরা টুকরা করল, নাকি এই কাজে তাকে কেউ সহযোগিতা করেছে এ ধরনের অনেক প্রশ্ন ভিড় করেছে জনমনে। টুকরা করার কাজে কী অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে, একটি সাধারণ বঁটি দিয়ে দেহ ও হাড় কিভাবে টুকরা করা গেল তা-ও বড় প্রশ্ন।
http://www.facebook.comVoiceofsenbag