মোবাইলফোনের মাধ্যমে আর্থিক লেন দেন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের গ্রাহকরা হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। ক্ষুদে বার্তা (এসএমএস) কারসাজি করে এ ধরণের প্রতারণা হচ্ছে। যেটাকে মূলত ‘মাস্কড’ এসএমএস বা কল বলা হয়।
প্রযুক্তির অপব্যবহার করে অপরাধীচক্র গ্রাহকদের কিভাবে প্রতারিত করছে তা জানতে চাইলে বিকাশের সিনিয়র ম্যানেজার (জনসংযোগ) মোহাম্মদ জাহেদুল ইসলাম ইনডিপেনডেন্টকে বলেন, অর্থ লেনদেনের সময় গ্রাহকদের প্রতারিত করতে বিকাশের শর্টকোড দিয়ে মাস্কড এসএমএস বা কল করা হচ্ছে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে মাহবুব জানান, ৪ আগস্ট তিনি এক ব্যক্তির কাছ থেকে একটি ফোনকল পান। তাকে বলা হয়, তার বিকাশ একাউন্টে ভুলক্রমে ওই ব্যক্তির কিছু টাকা চলে গেছে। টাকাটা ফেরত দেয়ার অনুরোও জানান অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিটি।
ফোন রেখে জনাব মাহবুব মোবাইলফোনের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে দেখেন ঠিকই তার মোবাইল ওয়ালেটে ১৫৩০ টাকা ঢুকেছে। গ্রামীনফোনের ০১৭ ৬৬৬৮১১৫৯ নম্বর থেকে তার নম্বরে আসা টাকাটি তিনি ফেরত পাঠান। বিকাশ প্ল্যাটফর্ম থেকে টাকা ফেরতের বিষয়টি নিশ্চিত করে এসএমএস দেয়া হয়। এ জন্য বিকাশের নির্ধারিত চার্জ ৫ টাকা কেটেও রাখা হয়।
কিন্তু টাকা পাঠানোর পর পরই ফিরতি এসএমএসএ দেখা গেলো মাহবুবের মূল ব্যালেন্স থেকেই এই টাকা চলে গেছে। অর্থাৎ মাহবুবের একাউন্টে টাকা আসার এসএমএসটি ছিলো ভুয়া এবং প্রতারকচক্র তার কাছ খেকে কৌশলে এই টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
বিকাশ কর্মকর্তাদের দাবি, এটি টেলিযোগাযোগ শিল্পের বহু পুরনো সমস্যা। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি এ সম্পর্কে অবহিত এবং তারা এটি রোধ করার কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের ব্র্যাক ব্যাংক এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানি ইন মোশন এলএলসির যৌথ উদ্যোগে গড়ে ওঠা বিকাশ লিমিটেড দেশের মোট মোবাইল আর্থিক সেবা বাজারের ৫৮ শতাংশের অংশীদার। বিশ্ব ব্যাংকের সদস্য ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্স করপোরেশন (আইএফসি) বিকাশ লিমিটেডের ইকুইটি পার্টনার। এতে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডশনেরও বিনিয়োগ রয়েছে।
গ্রাহকদের প্রযুক্তি নির্ভর প্রতারণার ঝুঁকি সম্পর্কে জানাতে অনিচ্ছুক বিকাশ। এ ধরণের সমস্যার কোনো সমাধান গ্রাহককে বাতলাচ্ছে না তারা। এসব সমস্যা সমাধানে উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগও নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে বিকাশের বক্তব্য, এ ধরণের লেনদেনের আগে গ্রাহকদের একাউন্ট ও ব্যালেন্স চেক করে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। এতে করে গ্রাহকরা প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোবাইলফোনে আর্থিক লেনদেন প্লাটফর্ম প্রতারণাকারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থালে পরিণত হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এক চিঠিতে এ ধরণের প্রতারণা রোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলেছিল। চিঠিতে বলা হয়, বিকাশের মাধ্যমে বহু গ্রাহক প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক ২ আগস্ট একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এ বিজ্ঞপ্তিতে ৫ হাজার টাকার উপরে লেনদেনের ক্ষেত্রে টাকা পাঠানো ও গ্রহণ করা ব্যক্তির ছবি তুলে রাখার কথা বলা হয়।
পরে তা পরিবর্তন করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনের জন্য নিবন্ধিত সিম পুনরায় নিবন্ধন করা এবং গ্রাহকের পরিচয় সনাক্ত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নমুনা আদেবন অনুসারে তথ্য মেলানোর নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর গ্রহণ করা ব্যবস্থা সম্পর্কে ৩০ সেপেটম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়। এ ছাড়া পরবর্তী কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রতি মাসের প্রতিবেদন পরের মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে জমার নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহি পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘মোবাইল ব্যাংকিং নিরাপদ করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্বেগ যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে বিচেনা করে মোবাইল ব্যাংকিং নিরাপদ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেয় ছাড়াও বিকাশের নাম ব্যবহার করে লটারির নামেও প্রতারণা করা হচ্ছে। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার কবাখালী শান্তিপুর গ্রামের মৃতসঞ্চয় চাকমার ছেলে বিপু চাকমা প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছিলেন। চলতে বছর জুলাই মাসে এ ধরণের প্রতারণার শিকার হন তিনি। তার মতে, বিকাশেরে নম্বর থেকেই এসএমএস এসছে। তাই অবিশ্বাস করার উপায় ছিল না।
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিশ্চিত করছে, বিকাশের শর্টকোড ব্যবহার করে এ ধরণের অপরাধ চলছেই। কিন্তু মোবাইল ফোনে আর্থিক লেনদন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ‘মাস্কড’ এসএমএসকে দায়ী করে দায়িত্ব শেষ করছে।
www.facebook.com/Voiceofsenbag