ঢাকা : মিরপুর প্রতিনিধি : থানা হেফাযতে নির্মম প্রহারে হত্যা, ক্রসফায়ারে মেধাবী ছাত্র হত্যা, থানায় ধরে এনে নির্মম নির্যাতন করে গ্রেফতার বানিজ্য! কি করেনি এই পাষুন্ড ? চরম টাকা খোর, টাকা ছাড়া কিছুই বুঝেনা। বিএনপি, জামায়াত- শিবিরের জন্য আবার টাকাতেও কিছু হয়না। খুন নয়ত পঙ্গুত্ব এটাই এখন অসহায় মানুষের নিয়তি। ছাত্র-শিক্ষক, ব্যবসায়ী, আইনজীবি কেউই রেহাই পায়নি ওসি সালাউদ্দিনের কুতকুতে হিংস্রতার কাছে।
প্রতিদিন গড়ে ২০ জন করে থানায় ধরে আনা তার নৈমত্তিক রুটিন।চলে বেধড়ক নির্যাতন আর চাঁদাবাজি। হাসিনার শেষ সময়ে আরও ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। পালাবদলের অপেক্ষায় আছে মিরপুরের হাজার হাজার ভুক্তভুগি বোবা কান্নার মানুষেরা।
ওসি সালাউদ্দিনের কীর্তিগাথা!
আগস্ট ২০১২, ওসি সালাউদ্দিনের নির্দেশে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ছাত্র আযহারুল ইসলামকে থানায় নিয়ে হাত পা ভেঙ্গে দেয় ও হাত পায়ের নখ তুলে ফেলে পুলিশ। পরিবারের কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিল।
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩, ছেলে শিক্ষানবিস আইনজীবি আসিফ মোহাম্মদ জুনায়েদকে মিরপুর থানা অন্যায়ভাবে আটক করলে থানায় যান বাবা অ্যাডভোকেট মোঃ নজরুল ইসলাম। ওসি সালাউদ্দিন পিতা পুত্র দুইজনকেই গ্রেফতার করে নির্যাতন চালায়।
১৭ মার্চ ২০১৩, বাবলু নামের এক যুবকের পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে পঙ্গু করে ওসি সালাউদ্দিন।
১০ এপ্রিল ২০১৩, রাত ৯ টার দিকে কাজীপাড়া থেকে মিল্টন ও শিপন নামে দুই যুবদল কর্মীকে গ্রেফতার করে। থানায় নেয়ার আধাঘন্টা পর হাতে পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাদের পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
২৬ ডিসেম্বর ২০১৩, রাতে পাইকপাড়ার ৩২১/এ আহমদনগরের রুনু কমিশনারের বাসাতেও অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় রুনুকে বাসায় না পেয়ে তার প্রতিবন্ধী কিশোর ছেলে আমীন মোহাম্মদ শুভ (১৩) ও এফসিএ পড়ুয়া মেয়ে শারমীনসহ কেয়ারটেকারকে তুলে নিয়ে যায় সালাউদ্দিন।
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪, জামায়াতের ডাকা হরতালে ফুটবল খেলতে যাওয়া কয়েকজন ছেলেকে ধরে নিয়ে এসে মিডিয়াতে পেট্রোল বোমা উদ্ধারের নাটক করে নিজের সাফল্য প্রদর্শনের জন্য।
৩১ জানুয়ারি ২০১৫, গভীর রাতে মিরপুর বেরিবাধ এলাকায় কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এমাদুল্লাহ নামের এক মেধাবী শিবিরকর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করে ওসি সালাউদ্দিন। রাতে মোহাম্মদপুরে এমদাদুল্লাহর জানাজা থেকে ৩ শিবির কর্মীকে গ্রেফতার করে মিরপুর থানায় ধরে নিয়ে যায়।
৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, রাত সাড়ে ৩টার দিকে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক যুবককে শিবির মনে করে ক্রসফায়ারে হত্যা করে।
৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, মেডিকেল কলেজের ছাত্র আব্দুল্লাহ হোসাইনকে তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ধরে নিয়ে আসে। খোজ নিতে থানায় গেলে তার ভাই হাসানকেও গ্রেফতার করে। তাদের দুইজনকে নিয়ে বাসায় অস্ত্র উদ্ধারে যেয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে এবং তাদের অসুস্থা বাবা এনায়েত উল্লাহকে থানায় ধরে নিয়ে যায়।
এখানে যা দেখছেন তা শুধু পত্রিকার পাতায় প্রকাশিত। পত্রিকায় আসেনি সেইসব মানুষের আর্তচিৎকার কি থেমে আছে ?
ওসি সালাউদ্দিনের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে। ১৯৯০ সালে সে এসআই হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। ২০০৬ সালে সে পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি পায়। এরপর থেকেই শুরু হয় তার ক্ষমতার দাপট। ২০০৭ সালে হাজারীবাগ থানায় ওসি হিসেবে যোগ দেয়। এক- এগারো সরকারের সময় তাকে বদলি করা হয়েছিল রাজশাহী রেঞ্জে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরপরই বদলি হয়ে আসে ঢাকার উপকণ্ঠ কেরানীগঞ্জে। ২০০৯ সালের ২৯ মার্চ কোতোয়ালী থানায় যোগ দেয়। ২০১২ সালের ১১ আগস্ট বদলি হয় মিরপুর থানায় এবং এখন পর্যন্ত তার কুখ্যাতি অব্যাহত রেখেছে।
চাকরি জীবনে একাধিকবার সাসপেন্ড হয়েছে। কিন্তু বীরবিক্রমে অজানা খুটির জোরে আবার হিংস্রতা নিয়ে হাজির হয়।
সূত্র : দৈনিক পত্রিকা/১৪ফেব্রুয়ারি ২০১৫।