নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে রাজনীতিকরণ করেছে আ.লীগ ||

বাংলাদেশের সঙ্কট রাজনৈতিক। এটা গৃহযুদ্ধ নয়। সরকার বিরোধী দলকে কোণঠাসা করে ফেলছে। বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যত গৃহবন্দি। নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে রাজনীতিকরণ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তারা অর্থনৈতিক উন্নয়ন দেখিয়ে বৈধতা পাওয়ার চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে তারা রাজনীতিকে একদলের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করছে। চাইছে কার্যকর একটি বিরোধী দল ছাড়াই সামনে চলতে। কিন্তু অবশ্যই তা হবে অত্যন্ত অগণতান্ত্রিক। এসব কথা বলেছেন জার্মানভিত্তিক গিগা ইনস্টিটিউট অব এশিয়ান স্টাডিজ-এর রিসার্চ ফেলো জেসমিন লোর্চ।

অনলাইন ডয়চে ভেলে’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। তার কথায় বাংলাদেশ এখন এক জটিল পরিস্থিতিতে। এমন অবস্থায় বেশকিছু সম্ভাব্য ঘটনা সামনে দেখা যাচ্ছে। তার একটি হতে পারে, সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে পারে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সম্ভবত অব্যাহতভাবে কোণঠাসা করে রাখবে বিরোধীদের। এতে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরার ক্ষেত্রে দীর্ঘ মেয়াদে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পেতে পারে। অন্য যা ঘটতে পারে তাহলো- কোন না কোনভাবে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ। জেসমিন লোর্চ মনে করেন, সামরিক বাহিনী হস্তক্ষেপ করলে তাতে নিঃসন্দেহে গণতান্ত্রিক অর্জন বড় আকারে পশ্চাৎমুখী হবে নিশ্চিতভাবে। তবে সবচেয়ে কাঙিক্ষত যে ঘটনাটি ঘটতে পারে তাহলো- আলোচনায় বসবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আলোচনায় বসার জন্য তাই সরকার ও বিরোধীপক্ষ- উভয়কেই চাপ দেয়া উচিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। সাক্ষাৎকারে জেসমিন বলেন, সহিংসতার অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিচার হলে তা পক্ষপাতহীন ও সুষ্ঠু হবে না। এর কারণ, বিচার বিভাগে রাজনীতিকরণ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অচলাবস্থা বিরাজ করছে। বিরোধী দল সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানোর চেষ্টা করছে। আর সরকার তাদেরকে কোণঠাসা করছে। প্রধানমন্ত্রী কি বিরোধীদের ভীতি প্রদর্শন করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে জেসমিন বলেন, বাস্তবিকই রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের দমনের চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ সরকার। এ বছরের জানুয়ারির শুরুর দিক থেকে খালেদা জিয়া কার্যত গৃহবন্দি। সরকার বিরোধী দলের আরও অনেক নেতাকর্মীকে আটক করেছে। বিএনপিঘেঁষা মিডিয়াও হয়রানির মুখে। জেসমিন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার তিন সহযোগীর বিরুদ্ধে সহিংসতার মাধ্যমে ৪২ জনকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযোগ আনা হয়েছে। এ অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগপন্থি একটি সংগঠনের সভাপতি। বিরোধীরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের বক্তব্য, রাজপথে যখন বিক্ষোভ-প্রতিবাদ হয়েছে সে সময়ে খালেদা জিয়া ছিলেন গৃহবন্দি।

তিনি আরও বলেন, সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতাকেও সীমিত করেছে। বিরোধী রাজনীতির প্রতি দুর্বল এমন ধারণা থেকে বেশকিছু মিডিয়াকে হয়রানি করা হয়েছে। বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের এমন কর্মকা-ের সমালোচনা করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস-এর মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠনগুলো। সাংবাদিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করার মাধ্যমে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলকে কোণঠাসা করতে চায় এবং এর মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় থাকতে চায়। জেসমিন লোর্চ আরও বলেন, বিএনপির অভিযোগ- আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধীদের কোণঠাসা ও হয়রানি করছে। এই অভিযোগ সুপ্রতিষ্ঠিত। তবে এটাও সত্য যে, বিরোধীরা সহিংসতা চালাতে প্রস্তুত। এদেশের জনগণের মাঝে শক্তিশালী সমর্থন রয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির। দু’দলেই এমন সমর্থক রয়েছেন, যারা সহিংসতায় জড়িত হন। এদিক থেকে বাংলাদেশের সমাজ খুব বেশি মেরুকরণ হয়ে আছে। তবে দেশটি যে সর্বোত বিশৃঙ্খলায় ধাবিত হচ্ছে এমনটা আমি ভাবি না। আমার মতে এটা রাজনৈতিক দলের দ্বন্দ্ব। এটা কোন গৃহযুদ্ধ নয়। দু’ দলেই আদর্শের পার্থক্য আছে। তবে তারা রাজনৈতিক মূল্যবোধের ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রে এক।

২০০৭ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে। এর ফলে তখন সামরিক অভ্যুত্থান হয়। তারপর পর্দার আড়ালে থেকে দু’বছর দেশ চালায় সেনাবাহিনী।

দৈনিক সেনবাগের কণ্ঠ/ ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৫।

Post a Comment

Previous Post Next Post