শিশু : শিশু ভূমিষ্ঠকালীন ব্যক্তির প্রাথমিক রূপ। যে এখনও যৌবনপ্রাপ্ত হয় নাই কিংবা বয়ঃসন্ধিক্ষনে প্রবেশ করেনি সে শিশু হিসেবে সমাজ কিংবা রাষ্ট্রে চিহ্নিত হয়ে আছে। সাচরাচর যে ছেলে বা মেয়ের বয়স ১৫ বছরের নীচে অবস্থান করেছে সে শিশু হিসেবে চিহ্নিত। কখনো কখনো অনাগত সন্তান অর্থাৎ যে সন্তান এখনো ভূমিষ্ঠ হয় নাই বা মায়ের গর্ভে অবস্থান করছে সেও শিশুরূপে পরিগণিত হয়ে থাকে।
পথকলি : পথকলি শিশু বলতে আমরা কি বুঝি? যে সকল রাস্তায় থেকে মানুষ হয়, যাদের নিজস্ব কোন ব্যস্থান নেই এবং কি অনেকের পিতৃপরিচয় নেই, তাদের আমাদের সমাজে টোকাই বা পথকলি শিশু বলে ডাকি। সমাজে অবলিত ভাবে বড় হয়। শিক্ষার আলো তাদের মাঝে না থাকায় কখনো কখনো তারা চোর, ডাকাত, ছিনতাইবা খুব খারাপ একজন মানুষ হয়ে বেড়ে উঠে। এরজন্য তারা দায়ি নয় দায়িআমাদের সমাজ।
পথকলি শিশুদের ঈদ : বাংলাদেশে ৯৫ ভাগ মানুষ মুসলমান। বছরে দুটি ঈদ এই দেশের মুসলমানদের সবচেয়ে বড় আনন্দময় দিন। সেই আনন্দময় দিন দুটো পথকলি বা টোকাদের জীবনেও আসে। কিন্তু কেমন কাটে তাদের ঈদ গুলো? রমজানের শেষ দিকে আমি আর আমার এক বন্ধুসহ ইউনিভার্সিটি থেকে রাজধানীক্ষ র্ফামগেট হয়ে বিজয়-স্বরনি দিয়ে বাসায় ফিরছিলাম। তখন বেলা ৩টা বাজে তাই প্রখর রোদ তাই ভাবলাম একটু পার্কে গিয়ে একটু বসি। বসে বসে যখন আমরা পেপার পড়ছিলাম তখনই আনুমানিক নয় বা দশ বছর একটি শিশু বয়সটা হবে সে এসে বলে: ভাইয়া ৫টা টাকা দিবেন আজ সারাদিন কিছুই খাই নাই। ছেলেটার কথাটা শুনে আমার জানি কেমন অনুভুতি হলো । সাথে সাথে আমি তাকে ১০ টাকার একটা নোট দিয়ে জিজ্ঞেস বললাম তুমি রোজা রাখো নাই? ছেলেটি আমাকে উত্তর দিলো আমরাতো সারাদিনই রোজা রাখি! এ কথা বলার পর আমার মনে হলে সে তো, ঠিকই বলেছে, সারাদিন উপবাস থাে এটা তো তাদের জন্য রোজা নয়তো কি? "তারপর আমি জিজ্ঞাস করলাম তোমর নামকি? তোমার কে কে আছে? জিজ্ঞেস করলাম। আমাকে উত্তর দিলো আমার নাম কবির। দূরে একটা গাছের নিচে পলিথিনে মোড়ানো একটি ছোট্ট ঘর দেখিয়ে বলে, “আমি ঐখানে মার সাথে থাকি। কবির জানায় তার বাবা অনেক আগেই তাদের ছেড়ে চলে গেছে। তােমার মা রোজা রাখে না? ছেলেটি ছেলেটি আমাকে উত্তর দিলো কেমনে, ভাইয়া খেতে পাইনা রোজা রাখবো ? কিছু দিন পরে তো ঈদ, তুমি কি ঈদের নতুন কাপড় কিনেছো? ছেলেটি হেসে ঈদের কাপড়! কে দেবে আমারে! কেনো তোমার মা! কবির আবার হাসে, বলে, মার হাতে অত টাকা নাই। খেতেই পারি না, আবার ঈদের নতুন জামা। হয়তো কারো যাকাতের কাপড় দিয়ে চলে যাবে তাদের এবারের ঈদটুকু। আমরা কি কবিরদের মত কারো কথা কখনো মন দিয়ে ভাবি আমাদের আশে পাশে ওদের মত অনেক শিশু ঘুরে বেড়ায়। আমরা ইচ্ছা করলেই তাদের জন্য কিছু না কিছু করতে পারি। আমরা যখন আমাদের শিশুদের জন্য কাপড় চোপড় কিনি তখন ইচ্ছে করলেই কিছু টাকা বাঁচিয়ে ওদের দু-তিনজনের জন্য কিছু নতুন কাপড় কিনতে পারি যা ওদেও কাছে ঈদের বহুল প্রত্যাশিত আনন্দ বয়ে আনবে। ঈদের দিন ওদের হাতে কিছু টাকা দিতে পারি যাতে করে ওরা সালামী পাওয়ার আনন্দ পাবে। দারিদ্র্রের তাড়নায় কষাঘাতে যাদের দু’বেলা দু’মুঠো খাবার যাদের জোটেনা তাদের কাছে অপ্রত্যাশিত ঈদ হয়ে উঠুক আমাদের সন্তানদের মতই প্রত্যাশিত একটি আনন্দ। এই সমাজে বিত্তবান অর্থশালী হাজারো মানুষ আছে যাদের সামান্য কিছু অর্থে এই পথ শিশুরা ঈদের আনন্দ পেতে পারে সেজন্য আমাদেরই উদ্যোগী হওয়া উচিৎ। আমাদের একটু খানি উদ্যেগ যেন আমাদের দরিদ্র প্রতিবেশী সন্তানদের মন হাসি আনন্দে ভরে তোলে সেটাই আমাদের কামনা।
লেখক- মো : সোহরাব হোসেন মাহাদী বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। E-mail :- Soharab.notunkhobor@gmail.com Facebook :- www.facebook/Soharab.Hossain.Mahedi