বাংলাদেশের বিচার বিভাগ এখন ব্যক্তির পাপেটে পরিণত । _________________________________________

বাংলাদেশে নির্বাহী  বিভাগ, আইন বিভাগ এবং বিচার বিভাগ এক ব্যক্তির পাপেটে পরিণত হয়েছে । গণতন্ত্র বন্দি বুলেটের নিশানায় । বৃহস্পতিবার লন্ডনে খ্যাতিসম্পন্ন ল’ফার্ম হলবর্ন চেম্বারর্স অয়োজিত সেমিনারে বৃটিশ আইনজীবীরা এসব কথা বলেন । দ্যা অনারেবল সোসাইটি অব লিংকন্স ইন ‘অ্যাওয়ারনেস অ্যান্ড ওয়ার্নিং অ্যাব্যাউট বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে ।

বৃটিশ আইনজীবীরা বলেন, এ অবস্থা চলতে পারে না । এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য তারা লিখিতভাবে বৃটিশ সরকারের কাছে আবেদন জানাবেন ।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হলবর্ন চেম্বারের প্রধান এবং মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার স্টুয়ার্ট স্টিভেন্স । এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- ব্যারিস্টার এ্যান হোওস, ব্যারিস্টার এস কে কুমার, ব্যারিস্টার ডেভিড রেকটার, বৃটিশ বাংলাদেশি ব্যারিস্টার অ্যান্ড সলিসিটর এ কে এম কামরুজ্জামান, ব্যারিস্টার আয়েশা কোরেশী, ব্যারিস্টার টিআইএম ওয়েলচ, ব্যারিস্টার ক্রিস্টিলি, ব্যারিস্টার ফ্রাংকো, ব্যারিস্টার মারিয়া গঞ্জালেস, ব্যারিস্টার এ গ্যালাহার এবং বৃটিশ বাংলাদেশি ব্যারিস্টার হুসেইন শামসুজ্জোহা ।

সেমিনারে বক্তারা বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে অবৈধ উল্লেখ করে এই সরকারের নেতা এবং মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে বৃটেনের কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য থাকলে তার ওপর অবিলম্বে অবরোধ আরোপের দাবি জানান । প্রয়োজনে তাদের বৃটেনে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও আহবান জানান তারা । আইনজীবীরা বলেন, বাংলাদেশের প্রধান একটি রাজনৈতিক দলের নেতা তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার না করার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি হুমকি-ধামকি প্রমাণ করে দেশটিতে গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা নেই । ব্যারিস্টার এ্যান হোওস বাংলাদেশের গণমাধ্যম সম্পর্কে তার লিখিত বক্তব্যে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর সরকারের অত্যাচার, সাগর-রুনীর হত্যার বিচার না হওয়া প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশে বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা এখন শূন্যের কোঠায় ।

মূল প্রবন্ধে ব্যারিস্টার স্টুয়ার্ট স্টিভেন্স বলেন, বাংলাদেশে নির্বাহী বিভাগ, আইনবিভাগ এবং বিচার বিভাগ এক ব্যক্তির পাপেটে পরিণত হয়েছে ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করছে । দেশটির বিশেষ বহিনী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব এখন জনগণের কাছে খুনি বাহিনী হিসেবে পরিচিত । অবিলম্বে র‌্যাব বিলুপ্তির দাবি জানিয়ে ব্যারিস্টার স্টিভেন্স একইসঙ্গে র‌্যাব সম্পর্কে বৃটিশ সরকারকে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করারও দাবি জানান ।

গত ৫ জানুয়ানির নির্বাচনকে হাস্যকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওই নির্বাচনে একজন এমপি সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ প্রকাশ্যে বলেছেন- তিনি নিজেই জানেন না কিভাবে তিনি এমপি হয়েছেন । এর চেয়ে হাস্যকর নির্বাচন আর কি হতে পারে ? খ্যাতিমান এই আইনজীবী বলেন, যেই নির্বাচনে জনগনের অংশগ্রহণ নেই সেই নির্বাচন বৈধ হতে পারে না, সেই সরকারও বৈধ হতে পারে না ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন দুটিই অনুপস্থিত । এমন একটি নির্বাচন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি । হাউজ অব কমন্স, মার্কিন সিনেট এবং ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টেও একাধিকবার বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে । ব্যারিস্টার স্টিভেন্স বলেন, ওইসব শুনানি শেষে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আহবান জানানো হয়েছে । কিন্তু সরকার এসব আহ্বানকে গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গুম-খুন করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে ।

বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বৃটিশ সরকারকে আরো কঠোর হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে দেশটিতে আদালত নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারছে না । বিচারকদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে দলীয় আনুগত্য বিবেচনায় । এমনকি দলীয় আনুগত্যের কারণে খুনের আসামিকেও বিচারক নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে ।

সেমিনারে বৃটিশ বাংলাদেশিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ব্যারিস্টার হাফিজুর রহমান, ব্যারিস্টার আশরাফ আরেফিন, অ্যাডভোকেট লিয়াকত আলী, অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সদস্য শামীম চৌধুরী ।

উৎসঃ নয়াদিগন্ত

Post a Comment

Previous Post Next Post