সাবেক ও বর্তমান আইনমন্ত্রীর দ্বন্দ্বে স্বস্তিতে জামায়াত

মানবতাবিরোধী অপরাধ ও দলের বিচার নিয়ে বর্তমান ও সাবেক আইনমন্ত্রীর দ্বন্দ্বে স্বস্তিতে আছে জামায়াত।

নিজামী ও সাঈদীর রায় আটকে রাখা, ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধে সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করা যাবে না মর্মে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের পরই দলটিতে আপাত স্বস্তির আবহ তৈরি হয়।

দলের নেতারা বলছেন, ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোটে শীর্ষ দুইজন নেতার রায় আটকে থাকা, ‘ট্রাইব্যুনাল আইনে জামায়াতের বিচার সম্ভব না’ আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্য এবং নতুন করে কোনো নেতাকে অভি‍যুক্ত বা গ্রেফতার না করায় এখন অনেকটা স্বস্তি বিরাজ করছে দলে।

সম্প্রতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সংগঠনের বিচারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে কিছু ত্রুটি রয়েছে। এই ত্রুটি সংশোধন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট আইনে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সংগঠনের বিচার করার কথা থাকলেও শাস্তির ব্যবস্থা নেই। এটাকে মন্ত্রী বড় ত্রুটি হিসেবে দেখছেন।

অন্যদিকে সাবেক আইনমন্ত্রী এর প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের জানান, এটি কোন বিবেচ্য বিষয় নয়। এ নিয়ে বিতর্ক করার কোনো সুযোগ নেই। ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত নেবে জামায়াতের বিচার হবে কি না। তার মতে, আদালতের বিষয়বস্তু নিয়ে বাইরে থেকে বক্তব্য দেয়া স্বাধীন বিচার বিভাগ বাস্তবায়নে বাধা। আদালতকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে।

২০১৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি শফিক আহমেদ আইনমন্ত্রী থাকা অবস্থায় একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে ব্যক্তির বিচারের পাশাপাশি সংগঠনের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী আনা হয়।

সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচারের জন্য ইতোমধ্যে এ মামলার তদন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের জন্য বিষয়টি এখন প্রসিকিউশন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। তবে এ নিয়ে প্রসিকিউশনের মধ্যেও কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে।

সাবেক ও বর্তমান আইনমন্ত্রীর এ মতবিরোধের সুযোগ নিচ্ছে জামায়াত।

এ ব্যাপারে দলটির নেতাদের বক্তব্য হচ্ছে, আইনমন্ত্রী যা করবেন তা আইনের মধ্যে থেকেই করবেন বলে মনে হচ্ছে। তাই জামায়াতকে আপাতত বড় ধরনের কোন সংকটে পড়তে হবে বলে মনে করছেন না তারা।

পাশাপাশি সরকার যদি মানবতাবিরোধী অপরাধ ও দল হিসেবে জামায়াতের বিচারের বিষয়টি নিয়ে সামনে না আগায় তবে সরকার বিরোধী আন্দোলনে জামায়াতের অংশ নেয়ার সম্ভাবনা কম বলেও উল্লেখ করেছেন তারা।

এছাড়া বিএনপিও সরকারবিরোধী আন্দোলনে আপাতত কোনো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে না।

নেতাদের দাবি, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি দলের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তির। এই অবস্থায় গায়ে পড়ে কোন আন্দোলন করে নিজে থেকে পরিবেশ নষ্ট করতে চান না তারা।

জামায়াতের নীতি নির্ধারণী ফোরাম নির্বাহী পরিষদের একজন সদস্য জানান, ৫ জানুয়ারির পর সারাদেশে কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের শিথিল ভাব চলে এসেছে। আবার সরকারও দলের নেতাদের রায় নিয়ে আর বেশি সামনে এগুবে না বলেও মনে হচ্ছে। এই অবস্থায় গায়ে পড়ে আন্দোলনে যাওয়ার কোন মানে হয় না।

এ প্রসঙ্গে ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের আইনজীবী প্যানেলের অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, জামায়াত নিয়ে সম্প্রতি আইনমন্ত্রীর বক্তব্য আইনি দিক থেকে বাস্তবসম্মত। তিনি যা বলেছেন আইনের মধ্যে থেকে বলেছেন।

তিনি বলেন, আইনমন্ত্রী সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচার নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা ট্রাইব্যুনাল আইনের সঙ্গে বাস্তবসম্মত।

তিনি বলেন, আইনমন্ত্রী যে তিনটি ধারায় সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচার করা সম্ভব না বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন সেই বিষয়গুলো নিয়ে ট্রাইব্যুনালে আমরা কয়েকবার শুনানি করেছি। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল আমাদের আবেদন বরাবর খারিজ করে দিয়েছেন। সুতরাং আইনমন্ত্রী যে তিন বিষয়কে সামনে এনে ট্রাইব্যুনালে সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচার সম্ভব না বলছেন, এটা শতভাগ যুক্তিসম্মত।

তবে দলটি এবার আগে মতো সহিংস আন্দোলনের দিকে না গিয়ে পরিবেশে পরিস্থিতি বুঝে ধীরেসুস্থে এবং সতর্কতার সঙ্গে মাঠে নামার পক্ষে। তবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়সহ দলের শীর্ষস্থানীয় দুই নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলার রায় এবং এ ব্যাপারে সরকারের আচরণ দেখে আন্দোলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, নেতাদের রায় কেন্দ্রিক ও ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে গিয়ে আন্দোলনে দলের যে ক্ষতি হয়েছে এখন তা গুছিয়ে নিতে চায় দলটি। তাই এ অবস্থায় স্থিতিশীল পরিবেশ নষ্ট না করে বরং এ সময়টা সংগঠন গোছানোর কাজে লাগাতে দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জামায়াতকে এবার আন্দোলনে নামার ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হচ্ছে বলে সূত্রগুলো বলছে। কারণ এর আগে সহিংস আন্দোলন করতে গিয়ে নেতা-কর্মীদের যেমন হারাতে হয়েছে তেমনি ইউরোপীয় পার্লামেন্টসহ আন্তর্জাতিক মহল জামায়াতের ওপর প্রকাশ্যে অসন্তুষ্টি জানিয়েছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে এবার আন্দোলনে নামার ক্ষেত্রে জামায়াতকে অনেক সাবধান হতে হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়।

উৎসঃ   বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

Post a Comment

Previous Post Next Post